বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের অপকর্ম বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশ পেয়ে গেছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে এবং সরকার নিজের অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ বর্তমান প্রেক্ষাপট : কোনো প্রতিকার নেই, দূষণ বেড়েই চলেছে, দেশের মানুষ বেঁচে আছে অসহায় অবস্থায়’ শীর্ষক আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, যখন নির্বাচন আসছে তখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গেছেন। সেখানে গিয়ে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলছেন বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য সাহায্য করেন আমাদের। যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেছেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে―নির্বাচন কেমন করতে যাচ্ছেন আপনারা, সেখানে কি বিরোধী দল আসছে এবং স্পষ্ট জিজ্ঞেস করে বলেছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য আপনারা কী ব্যবস্থা করছেন? তখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আপনি আমাদেরকে সাহায্য করেন বিএনপিকে আনার জন্য। আর এই লোকগুলো সারাক্ষণ কথা বলতে থাকে যে আমরা নাকি বিদেশিদের কাছে ধরনা দিই, আমরা বিদেশিদের সাহায্য নিয়ে কাজ করি। '
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে দূষণমুক্ত একটা নির্বাচন দরকার। দূষণমুক্ত নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং সেই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটা জবাবদিহিমূলক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে যাতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে গেছে। করোনার সময় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করুণ অবস্থা দেখা গেছে। সরকারের দুর্নীতির জন্য এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সমর্থনপুষ্ট একজন ব্যক্তিকে লাভবান করতে ভারত থেকে তিন-চার গুণ বেশি দামে ভ্যাকসিন আনা হলো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমাদের স্থায়ী সদস্য বলেছেন, বিবেক দূষণ। বিবেক তখনই দূষিত হবে যখন পুরো রাষ্ট্র দূষিত হয়ে যায়, পুরো প্রশাসন দূষিত হয়ে যায়, সব কিছু দূষিত হয়ে যায়। আজকে আমাদের মানুষদের বাঁচাতে হলে বিবেকে দূষিত না করতে হলে এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে আমাদের যেটা দরকার সত্যিকার অর্থেই জনদরদি, জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক একটা সরকার দরকার এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ দরকার। ’
প্রধান অতিথি, স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'আমাদের স্বাস্থ্য যেমন ভালো নয়, বাংলাদেশের সামাজিক স্বাস্থ্যও ভালো নয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য ভালো নয়, বাংলাদেশের প্রশাসনিক স্বাস্থ্য ভালো নয়, রাজনৈতিক স্বাস্থ্য ভালো নয়। বাংলাদেশ ভালো নেই, গণতন্ত্র নেই, মানুষের অধিকার নেই। বিচার বিভাগ আজকে দলীয়করণ, এ দেশে সুশাসন নেই, নিরাপদ পানি পাওয়া যায় না। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, ভেজাল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এর কারণ হচ্ছে এই সরকার জনগণের ভোটের সরকার নয়, গণতান্ত্রিক সরকার নয়। সে জন্য তাদের কাছে জনগণের স্বার্থ গুরত্বপূর্ণ নয়। তারা নিজেরা সিন্ডিকেট করে লুট করছে, মুনাফা নিচ্ছে। ’
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য দেন।
এর আগে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকরা বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে র্যালি বের করেন। এতে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।
0 মন্তব্যসমূহ