আমার বড় মামা মাসুদ।
ওয়াশরুমে আধা ঘন্টা যাবৎ ঢুকেছেন বের হওয়ার নাম নেই। এদিকে আমার পেটের ভেতর মোটর এর ইঞ্জিন চলছে কিছু একটা ডাউনলোড করার জন্য। ওয়াশরুমের কাছে যেতেই শুনি মামা শাওয়ার ছেড়ে গান গাইছেন,”রংপুরে গিয়ে দেখি রঙেরও মেলা-জানালা খুইলা দেখি দুধ আর কলা……”
মামা তোমার দরজা খোলা ..!
মামা : কিসের খেলা? আজকে তো টিভিতে কোন খেলা নাই !
আরে মামা খেলা না, বলছি তোমার বাথরুমের দরজা খোলা , তোমার হেয়ারিং মেশিন কই ?
দূর বেটা গোসলখানায় কেউ কি হিয়ারিং মেশিন নিয়ে ঢুকে!
যাইহোক তাড়াতাড়ি বের হও মামা, পেটে খুব চাপ দিচ্ছে আর পারছিনা ।
এইতো আর বিশ মিনিট ভাইগনা।
কি বললা মামা! বিশ মি…নি…ট !
মামা : বিশ…! কেডা বিষ খাইছে? তোর বড় মামি?
আরে বিষ খাই নাই কেউ , তাড়াতাড়ি বের হও না হলে আমার বিষ উজান বইবে!
বলে রাখা ভালো, বড় মামা বড় মামির ভয়ে আমাদের বাসায় আত্মগোপন করে আছেন সাতদিন ধরে । মামার দ্বিতীয় বিয়ের ফলে বড় মামি মানে মাসুদ মামার প্রথম স্ত্রী ভীষণ ক্ষ্যাপা, তাই মামা সবার ভয়ে এখানে উঠেছেন, এখানেও রক্ষা নেই বেচারার; তার বোন মানে আমার আম্মুর ঝাড়ি খাইতে হচ্ছে দিনরাত। মামার কানের প্রবলেম থাকায় আম্মুর ঝাড়ি মামা কর্ণপাত করেন না, কর্ণপাত করেননা বললে ভুল হবে বরং কর্ণপাত হয় না। মামার বের হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই দেখে অগত্যা তিনতলায় আন্টিদের বাথরুমে এন্ট্রি নিলাম। বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময় আন্টির সম্মুখীন হলাম। আন্টি আমাকে দেখা মাত্রই কড়া গলায় বলল, আদনান তোমাকে না বারণ করেছি আমাদের ইউনিটে উঠবে না। মিতুর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে কানাডা প্রবাসীর সাথে বুঝলে? নেক্সটাইম নানান বাহানায় উপরে আসবা না বলে দিলাম! জানালার পাশে দাঁড়িয়ে মিতু এসব শুনছে আর মিটিমিটি হাসছে। আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলাম, না পারলাম বোঝাতে মনের ব্যথা না পেটের ব্যথা।
নিচতলায় নামতে গিয়ে হঠাৎ বড়োসরো মোটা গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম, আরে একি! এযে বড় মামি হাজির, সাথে দুইজন পুলিশ!
কিছু বুঝে উঠার আগেই পুলিশ দুজন মামাকে বাথরুম থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনলেন।
মামীর সামনে মামার মুখটা কাচুমাচু হয়ে গিয়েছে, কাঁপা স্বরে মামীকে বলল, শাহানা তুমি এত নির্দয় ছিঃ ছিঃ..! তুমি পুলিশ নিয়ে এসেছো আমাকে ধরতে..!
চুপ শয়তানের বাচ্চা, আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করছিস আর কয়টা বিয়ে করছিস বল! তোকে জেলের ভাত না খাওয়াতে পারলে আমার নাম শাহানা বানু নয় হুহ..!
মামা: কি আমার ভাত খাবে না? কেন খাবেনা শাহানা লক্ষী আমার..! তোমাকে ছাড়া আমি একদিনও থাকতে পারিনা জানো না!
চুপ! বয়ড়া কোথাকার! ন্যাকামি ! একদিন ও থাকতে পারো নাহ না ! গত সাতদিনে একবারও খোঁজ নিয়েছো? বোনের বাসায় আত্মগোপন করেছো কেন আগে বল, কয়টা বিয়ে করেছ বল! তুমি ভেবেছো আমাকে ফাঁকি দেবে ? এই শাহানাকে ফাঁকি দেওয়া এত সহজ না বুঝলে! দেখলেতো মোবাইল ট্র্যাকিং করে তোমায় কেমনে খুঁজে বের করলাম!
পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সিঁড়ির আড়াল থেকে বের হয়ে মামীর সামনে আসলাম, মামার উপর নিশ্চিত গজব আসন্ন উপলব্ধি করতে পেরে মামিকে বোঝাতে সক্ষম হলাম যে, যতই চিল্লান কাজ হবে না , মামা তো আপনার গালিগালাজ শুনতে পারছে না। তার চেয়ে এক কাজ করি, আপনি গেস্ট রুমে রেস্ট নেন- আমি আর পুলিশ ভাই মামাকে আলাদা রুমে জেরা করে দেখি মামা কয়টা বিয়ে করছে-কোথায় করেছে..এসব তথ্য বের করতে পারি কিনা!
মনে হয় কাজ হয়েছে মামী হালকা গলায় বললেন ঠিক আছে, যাও; দেখো কিছু বের করতে পারো কিনা শয়তানটার কাছ থেকে। তবে সাবধান ব্যাটা আবার পালায় না যেন , ব্যাটা আমার সোনার সংসার টা শেষ করে দিল রে.…. মামি এসব বলে বিলাপ শুরু করে দিয়েছেন।
মামিকে আশ্বস্ত করলাম যে, মামা আর পালাতে পারবে না তাছাড়া সাথে পুলিশ তো আছেই।
পাশের রুমেই মামাকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হল..।
মামা বিপদ আঁচ করতে পেরে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, আমিও মামাকে ইশারায় আশ্বস্ত করলাম এবং ফিসফিসিয়ে বললাম, পুলিশ যা যা বলে সব মেনে নিবেন বুঝলেন! মামা শুনল কিনা বুঝলাম না তবে না শুনলেও বুঝতে পেরেছে ঠিকই হইতো!
জেরার শুরুতেই পুলিশ মামা কে বলল শুনুন মাসুদ সাহেব, যা যা জিজ্ঞেস করি সত্যি করে বলবেন, উপরের অর্ডার আছে কথা না শুনলে থানায় নিয়ে যেতে।
মামা: সত্যি বলছি আমি মার্ডার করি নাই, বিশ্বাস করেন; আমিতো শুধু বউ এর অনুমতি ছাড়া অার একটা বিয়ে করেছি মাত্র!
আরে মামা দূর…. মার্ডার নাহ অর্ডার! অর্ডার আছে তোমায় থানায় নিয়ে যাওয়ার ।
পুলিশ যা বলে সত্য সত্য সব বলে দাও। ইতিমধ্যেই আম্মু মামার হেয়ারিং মেশিনটা দিয়ে গেল।
পুলিশ: এইবার বলুন, বিয়ে দুইটাই করেছেন নাকি তিনটা?
মামা: কসম খোদার দুইটার বেশি একটাও করিনাই..!
পুলিশ: আরে নাহ ! আপনি তিনটা বিয়ে করেছেন, আপনার বড় বউ এর অভিযোগ আছে । আর আমাদের কাছে সব প্রমাণ আছে মিথ্যা বলবেন না একদম।
মামা: ওরে ভাগিনা কি বলেন ওনারা ….! কাঁদো কাঁদো স্বরে মামা বললেন ।
আমি মামাকে আশ্বস্থ করলাম, কিছুই হবে না মামা সত্যিটা বলে দাও।
পুলিশ: সত্যি বলুন মাসুদ সাহেব। (ধমকের সুরে)
মামা: আসলে কি থেকে যে কি হয়ে গেল স্যার..!
পুলিশ: আপনি বড় বউয়ের অসম্মতিতে আরো দুইটি বিয়ে করেছেন কি না?
দরজার দিকে তাকিয়ে কান্না কান্না কন্ঠে মামা: ইয়ে.. মানে.. জি হ্যাঁ! কিন্তু স্যার এখন আমার কি হবে? আমাকে বাঁচান স্যার, নইলে শাহানা আমাকে মেরেই ফেলবে স্যার!
পুলিশ: আরে কান্না থামান; মহিলা মানুষ যেমন গরম তেমন নরম।
মামা: এখন উপায় স্যার?
পুলিশ: আপনি বড় বউয়ের কাছে গিয়ে বলবেন, বাকি দুজন আপনার বউ নয়, আপনার বোন হয়।
মামা: কি বলেন…! বিয়ের কাবিননামা আছে তো শাহানার কাছে!
পুলিশ: বলবেন, ওটা জাল- মিথ্যা, বানোয়াট।
মামা: কিন্তু আমাদের বিয়ের যে ভিডিও আছে শাহানার কাছে!
পুলিশ: বলবেন, এগুলা এডিটিং করা যায়।
মামা: কিন্তু বিয়ের সাক্ষীরা তো শাহানার দলে যোগ দিয়েছে, যদি বলে দেয়!
পুলিশ: ধুর মিয়া.…. বলবেন, এসব ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার আমি।
মামা: কিন্তু আমি তো বিয়ে করেছি
পুলিশ: না আপনি বিয়ে করেন নি। ওই মেয়ে দুইটা আপনাকে ফাঁসাতে চেয়েছিল এটাই বলবেন।
মামা: কাজী ব্যাটা তো শাহানার আত্মীয় সব বলে দিবে তো!
পুলিশ: কাজী ব্যাটার লাইসেন্স নাই, দুই ঘা ডান্ডার ভয় দেখালেই মুখ বন্ধ করে দিবে।
মামা: ওই দুই বেটি কি আমায় ছেড়ে দিবে স্যার?
পুলিশ: শাহানা বানুও কিন্তু আপনাকে ছাড়বেনা!
মামা: কিন্তু অপরাধ না করে থাকলে সাতদিন লুকিয়ে রইলাম কেন! শাহানাকে কি উত্তর দিব?
পুলিশ: বলবেন, ব্যক্তিগত কাজে আত্মগোপন করেছিলেন।
আর পাঁচ হাজার টাকা আমার নাম্বারে সেন্ড মানি করে দিবেন।
মামা: তা না হয় দিলাম, কিন্তু এত বড় ডাহা মিথ্যা কথা কি শাহানা বিশ্বাস করবে?
পুলিশ: আলবৎ করবে। বেচারী সংসার বাঁচাতে পারছে সেটাই বা কম কিসে! মিথ্যা বলছেন, যদিও তা মেনে নেবে। মেয়েরা সব মেনে নেয়, মেনে নিতে হয়; মানিয়ে নিতে হয়।
(আমার গতরাতে ফেসবুকে একটা পোস্ট চোখে পড়ার কথা মনে পড়ল- কেউ একজন লিখেছিল, “আদনান জীবন নিয়ে বাড়ী ফিরে এসেছে সেটাই বা কম কিসে! গুম হয়েই থাকুক আর আত্মগোপনেই থাকুক ঘরের ছেলে ঘরেতো ফিরল! জনগণেরা বারবার এসব মেনে নেয়, মেনে নিতে হয়; মানিয়ে নিতে হয়।”)
এদিকে মামি কে ডেকে আনলেন পুলিশ। মামীর কাছে সব খুলে বলতে বললেন। মামা এক এক করে সব বলতে লাগলেন,
জানো শাহানা, এসব মিথ্যা-ষড়যন্ত্র , এগুলো এডিটিং করা যায়, কাজী ব্যাটার লাইসেন্স নেই। আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার!
বিশ্বাস কর বউ….
আমি ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপন করে ছিলাম।
মামি: ওগো, আমি জানতাম তুমি এমন নও, তুমি এমনটা করতে পারো না।
চলো বাসায় যাই।
মামি: ভালো হয়ে যাও মাসুদ, ভালো হয়ে যাও। ( মনে মনে)
মোঃ নূর-ই-আলম সিদ্দিকী
সহ: ইংরেজি শিক্ষক।
ময়মনসিংহ।।
0 মন্তব্যসমূহ