Hot Posts

6/recent/ticker-posts

ইশরাককে নিয়ে কি বললেন বিএনপি।


০৬ এপ্রিল ২০২২                                                             

প্রেস ব্রিফিং

এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী-সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি


সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,

আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের সকলকে জানাচ্ছি পবিত্র মাহে রমজানের আন্তরিক শুভেচ্ছা।

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আজ মতিঝিল এলাকায় শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে প্রচারপত্র বিলি করার সময় বিনা উস্কানিতে গত নির্বাচনে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ও বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারুণ্যদীপ্ত বিএনপি’র এই বলিষ্ঠ নেতাকে গ্রেফতার সম্পূর্ণরুপে কাপুরুষোচিত ও ন্যাক্কারজনক। সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের আশংকায় ইশরাক হোসেন এর মতো বিএনপি’র তরুণ নেতাকে আটক করা শুরু হয়েছে। সরকারের সকল ব্যর্থতা ঢাকতে হাবুডুবু খাচ্ছে, সেইজন্য জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতার করা হলো। আমি ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।

বন্ধুরা,

পুরো দেশটাকেই এখন নরকপুরিতে পরিণত করেছে ভোট ডাকাতির মাফিয়া সরকার। গ্যাস নাই, চুলা ঠান্ডা, রাস্তায় যানজট, বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিং, পুতি-দুর্গন্ধময় ওয়াসার ময়লা পানি, বাজারে আগুন। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সড়কে মৃত্যু, খুন, ডায়রিয়াসহ নিত্যপণ্যের দাম আওয়ামী সিন্ডিকেট লাগামহীন ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে দিয়েছে।বেশির ভাগ মানুষ চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন শেখ হাসিনার হাতে দেশ থাকলে অচিরে শ্রীলংকার মতো করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে।

সুপ্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,

রমজানের প্রথম দিন থেকেই সরকারের ব্যর্থতা আর ইচ্ছাকৃত অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি এখন চলছে গ্যাসশেডিং। বিদ্যুৎ যাচ্ছে-আসছে। এই আছে, এই নেই। লাইনে পানি আছে তো গ্যাস নেই। আবার গ্যাস থাকলে, পানি নেই। তীব্র গ্যাস সংকটে রোজা রেখে ইফতারিও তৈরি করতে পারছে না তারা। বাসায় যখন গ্যাস নেই, তখন তৈরি হয়েছে আরেক দুঃসংবাদ। ফের বাড়ানো হয়েছে এলপিজির দাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাইরে থেকে ইফতারি কেনা মানুষের জন্য তৈরি করছে বাড়তি সংকট। রাজধানীর যানজট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঘর থেকে বেরোলেই স্থবির হয়ে যায় জীবন। যানজটে অলিগলি, প্রধান সড়ক সর্বত্রই এখন স্থবিরতা। একে তো তীব্র গরম, তার ওপর অসহনীয় যানজট, জীবন যেন ওষ্ঠাগত। তীব্র যানজটের কারণে লোকজনকে এখন ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় থাকতে হচ্ছে। যানজটের এখন আর সকাল বিকাল বা রাত নেই। গভীর রাত এমনকি ভোরেও রাজধানী জুড়ে যানজট। ফলে লোকজন ঠিকমত অফিসে বা কাজে যেতে পারছেন না, ফিরতে তাদের গাড়িতে বা রাস্তাতেই ইফতার করতে হচ্ছে।

এখন রাজধানীবাসীর আরেক আতঙ্কের নাম ডায়রিয়া। করোনা মহামারির প্রকোপ কমলেও নতুন করে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া। প্রতি মিনিটে ১ জন এবং প্রতিদিন হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াসার দূষিত পানির কারণে এই ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ওয়াসার বেহায়া দুর্নীতিবাজ এমডি তাকসিম এ খান গতকাল মঙ্গলবার গর্ব করে বলেছেন, “আমার বাসার পানিতেও দুর্গন্ধ আছে”। এ কথা বলার পরেও তিনি নির্লজ্জভাবে চেয়ার আঁকড়ে রেখেছেন। ঢাকা ওয়াসায় লুটপাটের বিশাল সিন্ডিকেটের মাথার মনি করে তাকে ১৩ বছর যাবত এমডি রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছেন, আর এই সময়ের মধ্যে নিজের বেতন ভাতা বাড়িয়েছেন ৪২১ শতাংশ। এখন এখন বেতন-ভাতা পান মাসে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে নজীরবিহীন। এই এমডির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে, তিনি পানির দাম ও নিজের বেতন পাল্লা দিয়ে বাড়াতে পারেন। কিন্তু দুষিত পানি বিশুদ্ধ করতে পারেননি।

সচেতন সাংবাদিকগণ,

সরকার বড় বড় কথা বলে, সারাক্ষণ সপ্তসুরে গলাবাজি করে। ছবিতে বড় বড় ফ্লাইওভার, উড়াল সেতু বড় বড় ব্রীজ, মেগা প্রকল্প, দোতলা-তিনতলা রাস্তার ছবি দেখান যে, উন্নয়নে ভেসে যাচ্ছে দেশ। একেবারে প্রবল উন্নয়নের জোয়ারে বাংলাদেশ সয়লাব-এসব উন্নয়নের গল্প শুনতে শুনতে জনগণ ক্লান্ত হয়ে গেছে।  আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা আশংকা করছেন, বর্তমান পথ না ছাড়লে বাংলাদেশের পরিণতিও একই হবে। কেবলই সময়ের অপেক্ষা।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ,

আওয়ামী লীগের বিএনপি বিষয়ক এই দুই গবেষক ওবায়দুল কাদের ও হাসান মাহমুদ সাহেব এবং এদের সাথে মাঝে মাঝেই যুক্ত হন নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর কথিত আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা। দুই দিন আগে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, বিএনপির আমলে বিদ্যুৎ সংকটে নাকি দেশ অন্ধকারে ছিল। গ্রামে ৪/৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না, আর শহরে তো লোডশেডিং আছেই। একটি সরকার একটানা একযুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও নিজেদের কোনো কৃতিত্ব নেই। তাদেরকে এখনো বিএনপির সঙ্গে তুলনা করেই তাদের রাজনৈতিক  অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়।

এই উপদেষ্টা যখন তখন নানাভাবে আবির্ভূত হন তখনি জনগণের মনে ভয় ঢুকে, না জানি ভেতরে ভেতরে দেশের কোনো সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। মাসখানেক আগে নিশিরাতের সরকারের দুই মন্ত্রীর ফাঁস হওয়া কথোপকথনে শোনা গেছে, কথিত এই উপদেষ্টার শত কোটি টাকার ফাইল কোনো নিয়ম না মেনেই পাশ করে দেয়া হয়েছে।

বন্ধুগণ,

বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো মানুষের ভরা ফসলের ক্ষেত-খামার, প্রতিরক্ষা বাঁধ, বাড়ী-ঘর-রাস্তাঘাট সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভারতের মেঘালয়- চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে। কৃষকের চোখের সামনে সব ডুবলেও চোখের পানিতে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই। কৃষকরা তাদের একমাত্র ফসল হারিয়ে সর্বশান্ত। সুনামগঞ্জ-নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ ডুবিয়ে আশপাশের বিভিন্ন জেলায় অকাল বন্যা পরিস্থিতির বিস্তার ঘটছে। ভারত থেকে আসা পানির ঢলের কারণেই বাংলাদেশে অকাল বন্যায় লাখ লাখ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, মানুষের ঘরবাড়ী ভেসে যাচ্ছে। এসব এলাকায় বাঁধ দেয়ার জন্য শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। হাওড় রক্ষা বাঁধ উঁচু ও টেকসই করে নির্মাণ করা হলে এবং সংস্কার কাজ যথাযথ  হলে এতবড় ফসলহানির ঘটনা ঘটতে পারতো না। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের আত্মীয়স্বজন এবং তাদের দলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অব্যবস্থাপনা-অনিয়ম ও লুটপাটের বিচার আর বছরে একটি মাত্র ফসল হারা কৃষকদের কান্নার দায় কার ?

ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ