Hot Posts

6/recent/ticker-posts

শিশু নির্যাতন : ক্ষমার এখতিয়ার কি মায়ের?

যেই মহিলা তার ছেলেকে নির্যাতনতারী ‘শিক্ষকের’ বিরুদ্ধে অভিযোগকে প্রত্যাহার করে নিয়ে ভিডিও বক্তব্য প্রকাশ করেছে, অনেককেই দেখলাম ‘ক্ষমা মহৎ গুণ’ এই মর্মে উনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কেউ কেউ বলতেছে কত বড় “ঈমানদার নারী” দেখেছেন?

আচ্ছা ওনার ছেলেকে না পিটিয়ে যদি ওনাকে কেউ এইভাবে পিটাইতো তখনও কি তিনি একইভাবে তাঁকে ক্ষমা করে দিয়ে কথিত ‘ঈমানদারিত্ব’ ফলাইতে পারতেন?

গতকাল প্রশাসনের ভাবখানা মোটামুটি এরকম ছিল যে, ভুক্তভোগী ছেলেটির মা যদি নির্যাতনকারীকে ক্ষমা করে দেয় তবে আমাদের আর কি-বা করার আছে? অনেক বাবা-মাই আছে যারা বাচ্চাকে শিক্ষকের হাতে তুলে দিয়ে বলেন যে আমার বাচ্চাকে যেভাবে পারেন (এমনকি মারপিট করে হলেও) মানুষ করেন। এখানে মানুষ করা বলতে তারা বোঝায় বাচ্চাকে দিয়ে আসলে নিজের স্বপ্ন পূরণ করা। সেটা বাচ্চার উপর জোর-জবরদস্তি করে হলেও। যেন একটা বাচ্চার স্বতন্ত্র সত্ত্বা বলে কিছু নেই। বাচ্চাকে ইচ্ছেমত নিজের স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার বানানো যায়। বাচ্চাকে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অনুমতি দেওয়া যায়। বাচ্চার বেঁচে থাকার অধিকারকে কেড়ে নেওয়া যায়। নিজের স্বার্থে চাইলে বাচ্চাকে গর্ভে থাকতেই অ্যাব্রোশন করে হত্যা করা যায়, আবার চাইলে জন্ম দেওয়ার পরেও বাচ্চাকে গলাটিপে হত্যা করে হলের ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রাখা যায়। আবার বাঁচিয়ে রেখেও একটা বাচ্চাকে তিলে তিলে হত্যা করা যায়।

হলের ভিতরে বাচ্চাকে মেরে লাশ ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রাখার ঘটনার সময় অনেককেই বলতে শুনেছি যে, খুনির শাস্তি হবে না। কারণ খুন তো বাচ্চার মা-ই করেছে। যেন নিজের প্রয়োজনে বাচ্চার মা তার বাচ্চাকে খুন করতেই পারে। কারণ সে-ই তো বাচ্চার ‘মালিক’!! এটা খুবই স্বাভাবিক!

যেখানে বাচ্চার কথিত ‘মালিক’ নিজের প্রয়োজনে বাচ্চাকে খুন করলেও সেটাকে নরমালাইজড করা হয় , সেখানে কেউ যদি নিজ স্বপ্নে বিভোর হয়ে, বাচ্চাকে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে “মেরে পিটিয়ে হলেও ‘মানুষ’ (তাদের ভাষায়) করার পারমিশন দিয়ে আসে তবে সেটা তো এমনিতেই স্বাভাবিক!!

খালিদ এম তন্ময়

শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ