মুনিয়ার বখে যাওয়ার পিছনে এককভাবে মুনিয়াকে, বড়বোনকে বা বড়ভাইকে কাউকেই দায়ী করা যায় না। দায়ী যদি করতেই হয়, তবে সর্বপ্রথম ফেমিনিজমকে দায়ী করতে হবে। “শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার” এই শ্লোগানকে দায়ী করতে হবে (এখানে বলা ভাল, আনভীরও নারীবাদী, এবং একই শ্লোগানে বিশ্বাসী)। এই শ্লোগান শিখিয়ে যারা মুনিয়ার মত মেয়েদের ব্রেনওয়াশ করেছে তাদেরকেও এর দায় নিতে হবে। এইটা বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতির নৈতিকতার মানদন্ডের বিচারে।
তবে কেউ ফেমিনিজমের মানদন্ডে বিচার করলে এখানে মুনিয়া, এবং তার কথিত সুগার ড্যাডি আনভীরের মধ্যকার বিবাহ বহির্ভূত “অনৈতিক সম্পর্ক” এর ব্যাপারে নৈতিক অবক্ষয়জনিত প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগই নাই। কারণ নারীবাদী দর্শন অনুযায়ী, দুজন মানুষের পারস্পরিক সম্মতিতে, বা পারস্পরিক কোন চুক্তির ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপন অবৈধ নয়।
“মুনিয়ার উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন বা বিপথগামী হওয়ার পিছনে অভিভাবক হিসেবে আপনাদের কোন দায় আছে বলে মনে করেন কিনা” সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তার বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ বলেন “আমার বোন আমার কোন কথাই শুনত না, সে তার ইচ্ছেমত চলাফেরা করত”। মুনিয়া যে কারো কথাই শুনত না এটা তার বোনের বক্তব্যেও মোটামুটি পরিষ্কার। এইযে অভিভাবকের কথা না শোনা, বখে যাওয়া, ‘সুগার ড্যাডি’ ধরা, গুলশান বনানীর মত অভিজাত এলাকায় লাখ টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা, এবং বেপরোয়া জীবনযাপন এই সবকিছুর পিছনে দায়ী হচ্ছে একটি নারীবাদী শ্লোগান, “শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার”।
এইবার আসেন মুনিয়ার ধরা সেই কথিত ‘সুগার ড্যাডি’ আনভীরের প্রসঙ্গে কিছু বলা যাক। আনভীর একজন মেল ফেমিনিস্ট। আনভীর যে একজন ফেমিনিস্ট সেই সম্পর্কে কোন ধরণের সন্দেহের অবকাশ নাই। তার অ্যাক্টিভিটি পর্যবেক্ষণ, এবং ফেসবুক প্রোফাইল ঘাটলেই কিছুটা ধারণা পাবেন। আর তার কোম্পানি বসুন্ধরা গ্রুপ তো বাংলাদেশে ফেমিনিজমের গডফাদার। বসুন্ধরা গ্রুপ নিয়ে আপাতত এই লেখায় বেশি কিছু বলতে চাই না।
আনভীর এবং মুনিয়ার লিভটুগেদার বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে মুনিয়ার পরিবার যেমন মেনে নেয়নি, তেমনি আনভীরের পরিবারও কিন্তু মেনে নেয়নি। কিন্তু তাতে কী হয়েছে? পরিবার মেনে না নিলেও এতে আনভীরের এমন কি-ই বা আসে যায়? শ্লোগান তো একটা আছেই, “শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার”।
বাইশ বছর বয়সী একজন তরুণী চাইলে চল্লিশোর্ধ কোন যুবকের সাথে সব ধরণের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। এখানে তার ভাই অভিভাবক হিসেবে কোন হস্তক্ষেপ করলে সেটা নারীবাদী থিওরি অনুযায়ী নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে গণ্য হবে।
কিছুদিন আগে একটি সমাবেশে এক নারীবাদী নেত্রীর দেওয়া বক্তব্য এরকম ছিল যে, “আমি সিগারেট খাব না খাব, কোন পোশাক পড়ব না পড়ব, কোথায় রাত কাটাব না কাটাব এইটা নিয়ে তো আমার বাপই আমারে কিছু বলতে পারে না, আর আপনি কোন বাল?”
সুতরাং যারা মুনিয়ার বখে যাওয়ার পিছনে ফেমিনিজমকে দায়ী না করে এককভাবে শুধুমাত্র মুনিয়ার অভিভাবক হিসেবে তার বড়ভাই এবং বড়বোনকে দায়ী করছেন, তারা এইটাও মাথায় রাইখেন, নারীবাদী হেজিমনিতে একবার ব্রেনওয়াশড হয়ে যাওয়া কোন মেয়ের কাছে তার বড়ভাই, বড়বোন কোনও বালও না। যেখানে এরা নিজের জন্মদাতা বাপরেও গুনে না, সেখানে ভাই তো অনেক পরের কথা।
করোনা রোগীকে, এবং রোগীর কাছের মানুষদেরকে দায়ী করার চেয়ে, করোনা ভাইরাসকে দায়ী করাটাই অধিকতর সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। করোনা রোগী মারা গেলেও, পৃথিবী থেকে করোনা বিদায় হয়ে যাবে না। মুনিয়া চলে গেছে, কিন্তু নারীবাদ পৃথিবীতে এখনো রয়ে গেছে। যা আরও লক্ষ লক্ষ মুনিয়া-আনভীর তৈরী করার জন্য যথেষ্ট।
ডেকে আনা মৃত্যু নিয়ে আসলে বলার তেমন কিছুই থাকে না। তবুও বলছি, নারীবাদের ধোঁকায় পড়ে আর কোন বোন বিপথগামী হয়ে না যাক এটাই প্রত্যাশা। হতাশাগ্রস্ত হয়ে আর কেউ অকালে প্রাণ না হারাক।
মুনিয়ার মৃত্যু আত্মহত্যা নাকি হত্যা সেটা নিয়ে জনমনে যে সন্দেহ তৈরী হয়েছে, সেই সন্দেহ দূর করাটা বাংলাদেশ পুলিশের দায়িত্ব। দ্রুত তদন্ত শেষ করে এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই সন্দেহ দূর করতে হবে পুলিশের পক্ষ থেকে। এটি হত্যাকান্ড হয়ে থাকলে, উপযুক্ত প্রমাণসাপেক্ষে হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
খালিদ এম তন্ময়
শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
0 মন্তব্যসমূহ