নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা, তাং:০৯/০৭/২০২১ ইং।
ঝরা ফুলের কান্না!
<<<<<<<>>>>>>>>>
সকাল থেকেই বৃষ্টি একটানা। আকাশের অঝোর ধারায় ঝুম ঝুম বৃষ্টিতে ঠান্ডা আবহাওয়া যেন স্বর্গের স্নিগ্ধ বাতাস আমার ঘরে এসে আমাকে স্বাগত জানাচ্ছে। কয়েকদিন থেকেই ভাবছি লিখবো কিন্তু সময় আমাকে দেয় না অবসর।যেহেতু বইটা খুব মন দিয়ে পড়েছি! না লিখলে অপূর্ণতা থেকে যাবে।তাই আমার মতো নগন্য আনাড়ি মূর্খ মানুষ দু চারটি কথা বলতে চাই।
আলেকজান্ডার পুশকিন এর মতো ,I love though it makes me beat, though vain it seems and melancholy একটা (Confession -1826) কনফারেন্স এ বলিষ্ঠভাবে বলেছিলেন তেমন তো আমি নয়।অথবা ধুলোবালিছাই মাখা মনে অতো কথার গাঁথুনি কোথায় পাবো? আপনারা বুদ্ধিমান, পড়ুয়া, মেধাবী অবশ্যই আমার ভুলগুলোকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করি।
যে বইটির কথা বলছি তা হলো “মনের সাতকাহন”! না না এটা সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন এর মতো বিশাল উপন্যাস নয় বা কল্প কাহিনী নয় এটা নিতান্তই একজন অনুভূতিপ্রবণ মানবিক মনের গহীনে প্রতিধ্বনিত প্রবল সমুদ্রের ঢেউয়ের ছোট ছোট গর্জন।
লিখেছেন “হাজেরা কোরেশী অপি” যিনি একজন চরম নৈতিক ও মানবিক আবেগে ভরপুর,তার মনের চঞ্চলতা ও ভাবনাগুলো কবিতার মায়াজালে বন্ধি করতে চেয়েছেন।
ইসলামী ভাবধারা ও ন্যায়ের সমাজ ভিত্তিক যার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য।তার আবার অন্য কিছু দরকার কি? প্রতিবাদী ভাষা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক কথামালা তিনি সাজিয়েছেন তার কবিতায়। তার ছোট ছোট কবিতাগুলো যেন এক একটা বিশাল ম্যাসেজ। আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশিয়ে একটা সুস্বাদু রাতের ডিনারের আয়োজন এর মতো তার কবিতার আয়োজন। তার কাল্পনিক প্রতিবাদ গুলো যেন বাস্তব জীবনের ভিত্তি ,যেন রাজপথের লড়াকু সৈনিক হয়ে কলম ধরেছেন! কলমটা যেন সেই ভাষা সৈনিকদের প্রতিবাদি মিছিলের কর্মসূচি অথবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জয়োধ্বনি।
পারিবারিক বন্ধন কতোটুকু গভীর ও দায়িত্বপ্রবণ তা তার কবিতা পড়লে যে কেউ নিমিষেই বলতে পারবে।প্রেমের গভীর সম্পর্ক কি? শুধুমাত্র কি বিপরীতধর্মী লিঙ্গের প্রতি কামনার আগুন নাকি পারিবারিক ভালোবাসার গভীর আবেগ ও ছোট ছোট বন্ধনের তীব্র মায়া তা তার কবিতা না পড়লে বুঝা যাবে না।
নারীবাদী মানে পরিবার বিচ্ছিন্ন ও পুরুষের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব নয় তা অনেকের মতো আমারো মনে হয়।নারীর প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে অনেকেই এই বহিমিয়ান ভাষা ব্যবহার করে কিন্তু হাজেরা কোরেশী অপি এদিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
পরিবারের সদস্যদের উৎসর্গ করে তার কবিতা লেখা এবং তাদের উদ্দেশ্য করে কবিতার ভাষায় স্নেহ, ভালোবাসা,মান অভিমান ও উপদেশমূলক কথাবার্তা তিনি যে বলেছেন তা তুলনাহীন।
ইসলামী ভাবধারার এ কবি কিন্তু নতুন কবি নয় বা নতুন কবিতা লেখেন না তিনি তার ছাত্র জীবন থেকেই দস্যু ও দুরন্তপনায় খেলাচ্ছলে কবিতা লিখতেন। ৯০ দশকের ঐ সময়ে একটা মেয়ে কবিতা লেখে, রাজনীতি করে নাট্যকলায় যাতায়াত করে, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে,কাব্য লেখে,রাজনীতে নাম লেখায়, এটা যেন এই সিলেটের মতো পূণ্য ভূমিতে স্বপ্ন! তিনি কেনইবা এমন হবেন না যেখানে তার পরিবার সিলেটের অভিজাত পরিবারের একটা অন্যতম অভিজাত পরিবার।তার বাবা ছিলেন সিলেটের একমাত্র প্রকাশনী, ইসলামী প্রকাশনীর কর্ণধার সেখানে সে এমন হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠে তিনি এসেছিলেন একেবারে নতুন জগতে প্রবেশ করেছিলেন আলোর মিছিলে এটা যে কি পরিমান বাধা বিপত্তি ছিল তা ঐ সময়ের যে কোনো মেয়েই বুঝতে পারবে!
তাকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা করবো না,আপনারা তার বইটি পড়লেই বুঝতে পারবেন তিনি কোন ভাবধারার কবি। সুফিয়া কামালের মতো,কুহিলী উত্তরী তরী মাঘে্র সন্ন্যাসে চলিয়া গিয়াছে ধীরে ,রিক্ত হস্তে তাহারেই পড়ে মনে ভুলিতে পারি না কোন মতে’
কবি বর্তমানে প্রবাসী জীবন যাপন করছেন এজন্য সারাক্ষণ দেশের কথা,দেশের মানুষের কথা,দেশের অপরাজনীতি, অপসংস্কৃতি দুঃশাসনের কথা ভাবেন।
এগুলো মনে হয় তার অবসর ভাবনা থেকে প্রাত্যাহিক কর্মে ক্রমে ক্রমে তার মনে জায়গা করে নিয়েছে।
নচেৎ এই বর্তমান সময়ে কে কবিতা পড়ে,কে অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারে,কে আবেগের প্রকাশ করে,কে নৈতিকতার কথা বলে? এগুলো কবি কি জানেন না?
এই উত্তরাধুনিক যুগে কঠিন কঠোর দুর্বোধ্য ভাষায় কৃত্রিম রং মেখে সুখের ভাব নিয়ে লেখালেখি করে সেখানে কবি সাধারণ সহজ সরল প্রাঞ্চল ভাষায় কবিতা লিখেছেন তা কি কম পাওয়া!
O’Henry, Frost ,Adger Allen poe এরা কি সহজ সরল ভাষায় লেখালেখি করে বিখ্যাত হননি। প্রমথ চৌধুরীর মতো লোক কিন্তু সহজ সরল প্রাঞ্চল ভাষায় লেখার সুপরামর্শ দিতেন।
উত্তরাধুনিক যুগের অনেক কবি সাহিত্যিক মনে করেন কঠিন ও দুর্বোধ্য লেখা লিখলেই বুঝি লেখার গাম্ভীর্য প্রকাশ পায়! হ্যাঁ, Word diction একেক কবির একেক রকম এটা সন্দেহ নেই এবং এটা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করার কিছু নেই। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের ভাষা যেমন ভিন্ন তেমনি শেক্সপিয়ার ও গোর্কির শব্দ চয়নের ব্যবহার কিন্তু ভিন্ন। তাই শব্দ চয়ন দেখে একজনকে সহজেই অবমূল্যায়ন করা ঠিক নয়।
লিখছি হাজেরা কোরেশী অপির কবিতা নিয়ে চলে গেছে আরেক জায়গায়! মনোযোগ ধরে রাখতে পারছি না কেন? যাইহোক কবির কবিতাগুলোর মধ্যে অনেকের ছায়া দেখা যাচ্ছে,
যেমন তিনি তার মাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছেন,
জন্ম আমার ধন্য হলো তোমায় পেলুম বলে,
বেহেস্ত যে মোর জানি মাগো তোমার পায়ের তলে,
Adger Allen poe তার To my mother কবিতায় এভাবে বলেছেন, You who are mere than mother unto me,
And fill my heart of hearts where death is installed thee.
মায়ের প্রতি তার ভাবনাগুলো কবিতার মায়াজালে বন্ধি করতে চেয়েছেন।তার ভালোবাসার কথা তিনি মুখ ফুটে বলতে পারেন নি কিন্তু কবিতায় পূর্ণতা দিতে চেয়েছেন এটা বাঙালি নারীর চিরায়ত রূপ।
তিনি তার একটা কবিতায় লিখেছেন,’লেখার জন্য আমি আমার স্বত্তাকে কখনো বিক্রি করবো না’
আমার আত্মাকে কখনো মরে যেতে দেবো না’
কি ভাবনা ! তাই তো এমন কথা তো শুধু Pushkin কে বলতে শুনেছি। কবির স্বত্তা কি ? এই প্রশ্ন আমার ?
হাজেরা কোরেশী অপির স্বত্তা কি?
এই প্রশ্নের উত্তর মনে হয় কবি তার কবিতার মাধ্যমে দিয়েছেন।তার কবিতা পড়লেই বুঝতে পারবেন!
আমি আর বলছি না!
তার স্মৃতিচারণ খুবই অদ্ভুত সুন্দর আসলে যারা প্রবাসে থাকেন সবার ভাবনাই কি এমন? দেশ কে নিয়ে স্মৃতিচারণ খুবই কমন কিন্তু অদ্ভুত মায়া যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
হুমায়ূন আহমেদ তখন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনায় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো তো একবার নাকি ,আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি ,এই জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় কয়েক ঘণ্টা কান্নাকাটি করেছিলেন! কি অদ্ভুত মায়া! কি দেশপ্রেম!
(চলবে)
0 মন্তব্যসমূহ