কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন হতে যেমন বাধা নেই তেমনি আমাদের ডিজিটাল ডিজুস আবাল প্রজন্মেরও তথাকথিত সৃজনশীল পদ্ধতির ভেতর দিয়ে সৃজনহীন হয়ে উঠতে কোনোও সমস্যা হচ্ছে না। জাতির এত বড় ক্ষতি যারা করলেন, ইতিহাস তাদেরকে ক্ষমা করবে না। শুধু নাম দিলেই কী সৃজনশীল হওয়া যায়? এমনই সৃজনশীল আমরা বানাচ্ছি, এইচএসসি পাশ করে সনদ তুলতে এসে বাংলায় দরখাস্ত লিখতে জানে না। অধ্যক্ষ বানানে লিখে অদক্ষ, আবার কেউ লিখে প্রধান হেড মাস্টার অথবা হেড মাস্টার। এদের সৃজনশীল কর্ম দেখে হাসবো না কাঁদবো! আবার , করোনার আশীর্বাদে পরীক্ষা ছাড়াই অটো পাশ! এস্যাইনমেন্ট প্রশ্ন ওয়েব সাইটে দেওয়ার আগেই ইউটিউব সহ সোশ্যাল মিডিয়ার উত্তরের ছড়াছড়ি। সৃজনশীলপূর্ব যুগে এতটা অথর্বের দেখা পাই নি।
সৃজনশীল পদ্ধতির কর্তাব্যক্তিরা ভেতরের খবর জানেন কি না জানিনা। যিনি প্রশ্ন করেন আর যে ছাত্র/ছাত্রী উওর দেয় এবং যিনি খাতা দেখেন, সত্যিকার অর্থে এ তিন পক্ষের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই। তিন পক্ষই এখানে স্বাধীন। অর্থাৎ ছাত্র যদি বাঁশগাছের জায়গায় কলাগাছ লিখে দেয় কোনো সমস্যা নেই, গাছ তো লিখেছে, এটাই যথেষ্ঠ। এর নাম যদি সৃজন হয় তাহলে পিকাসো, গঁগা, দ্যা ভিন্সিরা লজ্জায় কোথায় লুকাবেন আল্লাহ মালুম। অর্থাৎ ছাত্র,শিক্ষক, পরীক্ষক তিন পক্ষই এ্যাবাস্ট্র্যাক বা বিমূর্ত ধারণায় আসীন। এরকম ভাব-বিলাসী এক আজব পদ্ধতির বেড়াজালে আমাদের সম্ভাবনাময় প্রজন্মের সৃজনশীলতাকে অঙ্কুরেই শেষ করে দিচ্ছে।
আমি নিশ্চিত এ পদ্ধতির ভেতর দিয়ে একজন জয়নুল কিংবা সুলতান বেরিয়ে আসবে না। জন্মাবে না একজন শহীদুল্লাহ কিংবা সুনীতিকুমার। জন্মাবে না একজন শেরে বাংলা কিংবা সোহরাওয়ার্দী। হ্যাঁ একটা বিশেষ শ্রেণি রয়েছে যারা খুবই ভালো। এটা কিন্তু সৃজনশীল পদ্ধতির অবদানে নয়, পারিবারিক সচেতনতার কারণে, অথবা ব্যতিক্রম। আর দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর সন্তানরা…যাহা লাউ তাহাই কদু।
সৃজনশীল এমনই এক আজব পদ্ধতি এখন আর রাত জেগে পড়াশোনার কোনো প্রয়োজন নেই। পরীক্ষা দিলেই পাশ, ছাত্ররা কোন দুঃখে কষ্ট করবে! এখনকার শিক্ষা পদ্ধতি অধ্যায়নের বাইরের শিক্ষাকেও ভুলিয়ে দিয়েছে। তাই আমাদের আবাল প্রজন্ম পোশাক পরতেও জানে না। অথচ পোশাক পরতে জানাও শিক্ষা। এদের পোশাক হচ্ছে হাঁটু কাটা জিন্স আর বুকের বোতাম ছাড়া টাইট জামা। হাতে মেয়েদের বালা আবার অনেকের কানে দুল ইত্যাদি ইত্যাদি। এরা এতই আবাল যে, খেতেও জানে না। এরা বিভিন্ন পানীয় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে এমন ভঙ্গিতে পান করে যা খুবই দৃষ্টিকটু। সত্যি জাতি হিসেবে আমরা ভয়ানক সুনামির মুখোমুখি।
আসলে সঠিক শিক্ষাই মুক্তির সোপান। মনে হয় আশির দশকের শিক্ষা পদ্ধতিই সঠিক ছিল। যারা আমার সঙ্গে দ্বিমত করবেন তাদেরকে বলবো – আগের প্রজন্মের সাথে আজকের প্রজন্মের সার্বিক বিষয়ে একটু তুলনামূলক চিত্র দেখে নিতে, তাহলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আগে গ্রাম থেকে যে পরিমাণ মেধাবী বেরুতো এখন তা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এ কমে যাওয়াটাও তথাকথিত সৃজনশীলতার কুফল। এ আজব পদ্ধতি শিক্ষা ব্যয় পাঁচ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে,যা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পক্ষে বহন করা অসম্ভব। যারা এ পদ্ধতি চালু করেছেন তারা আর্থিক লাভবান হয়েছেন তাই ওনারা এর পক্ষে সাফাই গাইবেন এটাই স্বাভাবিক। কক্সবাজার বিলাসবহুল হোটেলে বড় অঙ্কের বাজেটে এ পদ্ধতির সেমিনার করার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে তারা এর পক্ষেই থাকবেন। বই কোম্পানি,কোচিং মালিক এরাও পক্ষে থাকবে।
লেখক: মাজহারুল ইসলাম, শিক্ষক,লেখক।
0 মন্তব্যসমূহ