ছাত্রদেরকে চুল কেটে দিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায়, শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে বহিষ্কারের দাবিতে আমরন অনশন করছেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এই দাবিকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে, তাদের এই অনশন কর্মসূচিকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা এইড ফর মেন। আজ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে সংস্থাটি।
সংস্থাটির সভাপতি ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ছাত্রদেরকে চুল কেটে দিয়ে লাঞ্ছিত করার মত এরকম পাশবিক একটি কাজ কোন শিক্ষক করতে পারে না। নিপীড়নকারী শিক্ষিকাকে শুধু বহিষ্কারই নয়, ফৌজদারি আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিৎ, যাতে ভবিষ্যতে আর কোন শিক্ষিকা কোন ছাত্রকে লাঞ্ছিত করার মত ধৃষ্টতা না দেখায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এবং এইড ফর মেন ঢাবি শাখার আহ্বায়ক মাহিন মুর্তজা অনিক এক বিবৃতিতে বলেন, ছাত্রদের গায়ে হাত দেওয়ার এখতিয়ারও কোন শিক্ষিকার নেই, সেখানে চুল কেটে দিয়ে লাঞ্ছিত করা তো অনেক পরের কথা। এরকম নিপীড়ক শিক্ষিকাকে স্থায়ী বহিষ্কারের যে দাবি রবি শিক্ষার্থীরা করেছেন, তা সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত এবং যৌক্তিক। শিক্ষার্থী নিপীড়নের যেকোন ঘটনায় এইড ফর মেন সবসময়ই সোচ্চার ছিল, এখনও আছে, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এর আগে ২০১৯ এ কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রকে র্যাগিংয়ের ঘটনার প্রতিবাদে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্যের সামনে নিপীড়কদের শাস্তি, উত্যক্তকরণ আইনের লিঙ্গনিরপেক্ষ সংস্কার সহ তিন দফা দাবিতে কর্মসূচি দিয়েছিলাম, এবং সফল হয়েছি। নিপীড়করা বহিষ্কৃত হয়েছে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে উত্যক্তকরণ আইন সংস্কারের ব্যাপারে হাইকোর্ট রুল জারী করেছে। এবারও শিক্ষার্থীদের জয় হবে ইনশাআল্লাহ।
শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন করতে অনুরোধ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪ জন শিক্ষার্থীকে মাথার চুল কেটে দিয়ে লাঞ্ছিত করেছে ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন নামের এক শিক্ষিকা, এরকমটাই অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের। এছাড়া পরীক্ষার হলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ফারহানা।
ফারহানা ইয়াসমিন তার ব্যক্তিগত কক্ষে ডেকে নিয়ে আরেক দফা গালিগালাজ করেন এবং বহিষ্কারের হুমকি দেন নাজমুল হাসান তুহিন নামের এক শিক্ষার্থীকে। অপমান সহ্য করতে না পেরে তুহিন সোমবার রাত ৭টার দিকে দ্বারিয়াপুরের শাহমখদুম ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে দরজা বন্ধ করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হন।
রাত ৮টার দিকে তার সহপাঠিরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে। সহপাঠীরা প্রথমে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকের কলেজে নিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাতেই রবি ক্যাম্পাসে ছুটে এসে বিক্ষোভ করেন। গভীর রাত পর্যন্ত তাদের এ বিক্ষোভ চলে। পরে মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা আবারও বিক্ষোভ শুরু করলে রবি ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের মোবাইলে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা সকলেই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগে অধ্যয়নরত, এবং অভিযুক্ত শিক্ষিকাও একই বিভাগের।
‘নিপীড়ক’ শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিতে বর্তমানে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে রবির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ বলেন, পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উক্ত শিক্ষিকা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান পদ, সহকারী প্রক্টর পদ ও প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছেন। তাকে স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0 মন্তব্যসমূহ