কখনও তিনি প্রতিমন্ত্রীর (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী) বড় ভাই, কখনও গোয়েন্দা অফিসারের আত্মীয়। বিভিন্ন সময়ে তিনি বিভিন্ন প্রভাবশালীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
এ পরিচয়ে নদী-নদীতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জমাল হোসেন। এবার এক নাবালক ছেলের মোটরসাইকেল কেড়ে নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের চাকরি খাওয়ার হুমকি দিয়ে প্রকাশ্যে হুমকি দিলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
সোমবার (২৮ মার্চ) উপজেলার জাদুরচর ইউনিয়নের কার্তিমারী বাজার এলাকায় রৌমারী-ঢাকা মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজ ধারণ করেছে বাংলা ট্রিবিউন।
জানা গেছে, সোমবার দুপুরে সুরুজ্জমালের ছোট ছেলে মোঃ আরিফ (১৭) বিনা হেলমেটে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সহকারী ট্রাফিক পরিদর্শক আব্দুল হাই ও তার সহকর্মীরা কার্টিমারী বাজারে তাকে আটকে দেয়। আরিফ যখন তার বাবাকে নিজেকে মুক্ত করার কথা জানায়, তখন সুরুজ্জামাল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তিনি এসে ছেলের গাড়ি থামাতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশ কর্মীদের উপর হামলা চালান। এই নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক।
যদিও তাঁর ছেলের দ্বারা চালিত গাড়িতে কোনও নম্বর প্লেট ছিল না, সুরুজ্জমাল দাবি করেছিলেন, "আমার কাছে আমার কাগজপত্র রয়েছে।
উপস্থিত জনতার সামনে উত্তেজিত কণ্ঠে সুরুজ্জমাল ট্রাফিক পুলিশের সহকারী পরিদর্শক আব্দুল হাইকে বলেন, আমি কি আপনার সাথে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি? তোমার কাছে একটা কলম আছে, তুমি গাড়ি চালাও, আমি আমার গাড়ি কায়রা নিয়া আসমুকে আনার চেষ্টা করছি। তোমার কলমের শক্তি আছে, তুমি মোটর সাইকেল চালাতে পারো, আমারও একটা কলম আছে, তোমার কাজ খাওয়ার ক্ষমতা আমার আছে। '
এ সময় ট্রাফিক পুলিশের আরেক সদস্য এরশাদ আলী এগিয়ে এলে সুরুজ্জমালও তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
ওই পুলিশকর্মীকে নিশানা করে তিনি বলেন, আপনার কাছে কলম আছে, আমারও কলম আছে। সারা দেশে গাড়ির কিছু হয় না, ফাঁকা সারিতেই ধরা পড়ে যায় গাড়ি। জবাবে ওই ট্রাফিক পুলিশকর্মীকে বলতে শোনা যায়, 'আমার কাজ গাড়ি ধরা। তখনই পুলিশ উঠে পড়ে। পারলে পুলিশ উঠুক। '
তখন সুরুজ্জমাল মিয়া ওই পুলিশ সদস্যকে বলেন, শোন মামা, ওসি সাব-পাগল ছিল না? সেই ওসির পাগলামি ছেড়ে দেননি? চলে যাচ্ছে, কিন্তু। '
নামফলক এ সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ লেখা মোটরসাইকেলের দিকে ইঙ্গিত করে এই নেতা আরও বলেন, 'এই গাড়ি ধরার কোনো আইন নেই। এ কথা বলে আটক গাড়ি নিয়ে নেতা চলে যান।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জমাল হোসেন বলেন, 'আমি এটা বলিনি। এগুলো গুজব। রাজনীতিতে এলেই তা ছড়িয়ে পড়ে। '
ভিডিওতে এ ধরনের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি কি পুলিশের চাকরি খেতে পারি? আমি যা বলেছি তা নয়।
এ সময় ভিডিও নির্মাতা সন্দেহে স্থানীয় এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাকে গালিগালাজ করেন তিনি। ওসির পাগলামির উদ্ধৃতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, রৌমারী থানার সাবেক ওসির কথা বলেছি।
হেলমেট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই মোটরসাইকেল চালানো উচিত ছিল কিনা জানতে চাইলে সুরুজ্জমাল বলেন, "এটা ঠিক নয়। গাড়িটি আমার ছেলের নয়, এটা আমার। '
প্রতিমন্ত্রীর বড় ভাই ও গোয়েন্দা কর্মকর্তার দুলাভাই সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, 'এগুলোই মিশে যায়। যারা এগুলো ছড়িয়ে দিয়েছে, তারা ভালো হবে না। আমি কোনো ব্যবসা করি না। আমি খাই এবং মসজিদে যাই এবং প্রার্থনা করি। এটা আমার কাজ। '
ট্রাফিক পুলিশের সহকারী পরিদর্শক আব্দুল হাই বলেন, 'তার ছেলের মাথায় হেলমেট ছিল না। এ কারণে আমরা তাকে আটকে দিয়েছি। পরে সুরুজ্জমাল এসে গাড়িটি নিয়ে যায়। বিষয়টি সেখানেই মিটে গিয়েছে। '
চাকরি খাওয়ার হুমকি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, 'আমি এমন কোনো কথা শুনিনি।
0 মন্তব্যসমূহ