দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির ‘সক্রিয়’ নেতাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “আমাদের যারা অ্যাকটিভ পলিটিক্স এবং ইলেকশন করছেন বা করবেন… এই ধরনের নেতৃবৃন্দকে গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, তোমরা নির্বাচন করবা যদি বিএনপি নির্বাচন না করে তাও।”
বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা এই অভিযোগ করেন।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের পর ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি ২০১৮ সালে ভোটে এলেও এখন এক দশক আগের অবস্থানে ফিরে গেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া ভোটে না আসার ঘোষণা দেওয়া বিএনপি বলছে, তাদের দাবি না মানলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, বিএনপি ভোটে না এলেও দলটির অনেক নেতা নির্বাচনে আসবে বলে তিনি নিশ্চিত।
গত ১৬ জুন ঢাকার মিরপুরে এক সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের এ নেতা বলেন, “ফখরুল সাহেব, যতই লাফালাফি করেন, যতই চোখ রাঙান- আপনাদের দলের লোকেরা তলে তলে অনেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
ফখরুল অভিযোগ করেন, তার দলের অনেক নেতাই এই ধরনের চাপের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আই হ্যাভ আ লট অব লিডারস, যারা এ অভিযোগ করেছে। আমরা কোন দেশে বাস করছি?
“এটা একটা মধ্যযুগীয় বর্বর যুগে আমরা বাস করছি। এই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য এমন কোনো হেন কোনো অন্যায় নাই যে তারা করছে না।”
‘ওরা দেশের ভূ-রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে’
যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চায় বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিকদের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তাকে দেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে দেখছেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “কি রকম মরিয়া হয়ে গেছে যে, দেশের ক্ষতি করতেও তারা দ্বিধা করছে না। আজকে অন্যান্য দেশ সম্পর্কে তারা যে কথাগুলো বলছে এটার জন্য আমাদের দেশের ভূ-রাজনীতি ক্ষতি হতে পারে এবং আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি ইতিমধ্যে। এই ধরনের কথা-বার্তাগুলো কোনো দায়িত্বহীন নেতা বলতে পারেন, বিশেষ করে সরকার চালাচ্ছেন যিনি তিনি বলতে পারেন… এটা আমরা কল্পনা করতে পারি না।”
ফখরুল বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আসা এ ধরনের বক্তব্যে তারা যারা ‘সুস্থ রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন’, তাদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
“তারা (সরকার) স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন এবং আগে থেকেই বুঝতে পেরেছেন যে তাদেরকে জনগণ আর গ্রহণ করবে না। তাই কোনোভাবেই তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা শুনছেন না, একেবারে ওদিকে যাচ্ছেনই না।”
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য আসছে, তার জবাবে তিনি বলেন, “সংবিধান কে কাটাছেঁড়া করেছে? সেই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলে তো অবশ্যই এয়োদশ সংশোধনীতে যে কেয়ারটেকার সরকার ছিল সেটাই থাকবে এবং সেটা থাকা উচিত।
“একটা রাজনৈতিক একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল সব দলগুলো মিলে। সেখান থেকে সরে গিয়ে নিজেরা একতরফাভাবে শুধু নিজেদের ক্ষমতায় রাখার জন্য একাজগুলো করেছেন।”
জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না: প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ
আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশেও বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “দয়া করে অসাংবিধানিক কাজের সঙ্গে নিজেদের জড়িত করবেন না এবং জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না।
“এদেশের মানুষ যখনই কোনো ‘অগণতান্ত্রিক’ সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, ‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, তারা তাদের অধিকার আদায় করে নিয়েছে। এখনো তারা অধিকার আদায় করে নেবে।
“যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা, কর্মচারী, তাদের দায়িত্বশীলতা শুধু জনগণের প্রতি, সেই জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলতা পালন করবেন। অন্যায়-বেআইনি নির্দেশের ফলে আপনারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকে ব্যাহত করবেন না।
“শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করা, গ্রেপ্তার করা, নির্যাতন করা … এটা ভয়াবহভাবে রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল বলে আমরা মনে করি। দয়া করে এটা থেকে বিরত থাকুন, জনগণের সঙ্গে আসুন।”
বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু, যুব দলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাবেক মহানগর সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির শেখ রবিউল আলম রবি, হারুনুর রশীদ হারুন, ওবায়দুর রহমান লিটন, আরিফুল ইসলাম আরিফসহ গ্রেপ্তার হওয়া ন নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে করা মামলাসমূহ প্রত্যাহারেরও দাবি জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, “২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ‘গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই কাজটি এখন পুরোপুরিভাবে শুরু হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই আমাদের অ্যাকটিভ নেতাদের জেলে আটকিয়ে রাখা।
“এসব নেতাদের জামিন হচ্ছে উচ্চ আদালত থেকে। কিন্তু তাদেরকে আরেকটা মামলা দিয়ে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। একটা ভয়াবহ অবস্থা।”
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকন, আবদুস সাত্তার, লিটন মাহমুদ, মনির হোসেন, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণ যুব দলের সাঈদ হাসান মিন্টু, খন্দকার এনামুল হক এনাম, মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাঈদ মোরশেদ পাপ্পা, মহানগনর দক্ষিণ কৃষক দলের কামাল হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন বাদশা ও ছাত্রদলের আল আমিন এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ