Hot Posts

6/recent/ticker-posts

বিএনপির ইলিয়াসসহ নিখোঁজ ৫৩ ব্যক্তির তথ্যের খোঁজে পুলিশ

                   
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীসহ রাজধানী থেকে বিভিন্ন সময়ে ‘নিখোঁজ’ ৫৩ ব্যক্তির হালনাগাদ তথ্যের খোঁজে নেমেছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তালিকাসহ চিঠি পেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এই তথ্য জানতে চেয়ে অধীনস্থ সব অপরাধ বিভাগ ও গোয়েন্দা বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর তাঁরা নিখোঁজ রয়েছেন।

এই তালিকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নামও রয়েছে। তবে ২০১৫ সালে তুলে নিয়ে যাওয়ার এক দিন পরই মান্নাকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিল পুলিশ। তিনি বর্তমানে রাজনীতিতে সক্রিয়। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের খোঁজ কয়েক বছর আগেই মিলেছে ভারতের মেঘালয়ে। অনুপ্রবেশের মামলায় তাঁর খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল সম্প্রতি খারিজ হওয়ায় তাঁর দেশে ফিরতে বাধা নেই।


পুলিশ সূত্র বলেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন তুলে নিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ ৫৩ ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তালিকাসহ চিঠি দেয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেখান থেকে পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে তা ডিএমপিতে যায়। এরপর ডিএমপি এই নিখোঁজদের সর্বশেষ তথ্য জানতে চেয়ে গত ৯ মে সব অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনারকে (ডিসি) চিঠি দেয়। চিঠির সংযুক্তিতে তালিকাসহ ওই ব্যক্তিরা কীভাবে নিখোঁজ হয়েছেন তার বর্ণনা রয়েছে। ওই ব্যক্তিদের পিসি/পিআর (আগের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য), নিখোঁজের তারিখ, গুমের বর্ণনায় প্রাপ্ত যেসব অভিযোগ, যদি কেউ ফিরে থাকে, নিখোঁজের বিষয়ে কোনো মামলা বা জিডি আছে কি না–এসব যাচাই করে যত দ্রুত সম্ভব জানাতে বলা হয়েছে।


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটি থেকে এ ধরনের চিঠি মাঝেমধ্যেই আসে। আমরা তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিই। তারা যে প্রতিবেদন আমাদের কাছে পাঠায়, আমরা তা ফরোয়ার্ড করে থাকি।’


এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে ‘গুমের শিকার’ ৭৬ জনের একটি তালিকা দিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ১০ জনকে পরে খুঁজে পাওয়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে সংস্থাটিকে জানানো হয়েছিল।


জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. মনজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিখোঁজ হয়েছেন কিন্তু ফিরে আসেননি এমন ব্যক্তিদের খোঁজখবর রাখা ও তথ্য হালনাগাদ করা পুলিশের একটি চলমান কাজ।’


তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই ৫৩ জনের মধ্যে ৪৫ জনকে র‍্যাব পরিচয়ে এবং ১ জনকে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। বাকি ৭ জন কীভাবে নিখোঁজ হয়েছেন, সে বিষয়ে তথ্য নেই। সর্বোচ্চ ১১ জন নিখোঁজ হয়েছেন ২০১৫ সালে। তালিকা অনুযায়ী, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল দিবাগত রাতে বনানী থেকে নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক আনসার আলী। তাঁরা আর ফেরেননি। ২০১০ সালের ২৪ মার্চ ফার্মগেটের একটি রেস্তোরাঁ থেকে র‍্যাব-২ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ইউসুফ আলম সুজন। একই বছরের ১৭ মার্চ ভোররাতে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের ভাড়া বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল মোহাম্মাদ জালালকে।


ডিএমপির উপকমিশনার (অপরাধ) শচীন চাকমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি তালিকা ও ছকসহ নিখোঁজদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডিএমপির পক্ষ থেকে সব বিভাগের ডিসিকে পাঠানো হয়েছে। তবে এই তালিকা কে করেছে, কারা চেয়েছে, এসব বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’


তালিকা অনুযায়ী নিখোঁজ অন্যরা হলেন ২০০৯ সালে জহির রায়হান হিরোন, মাহমুদুল হক রনি; ২০১০ সালে আয়ুব আলী সরদার, মোহাম্মাদ লাল বাবু, তারিক উদ্দিন আহমেদ, ফোরকান, আবুল হায়দার; ২০১১ সালে তৌফিকুল আহমেদ হাসান, সাগর আহমেদ লিটন, মোহাম্মাদ জামাল আহমেদ, আলিফ, আল আমিন, ইসমাইল বাবু। ২০১২ সালে ইমাম হাসান ইলিয়াস বাদল। ২০১৪ সালে সামসুল ইসলাম, সোহেল রানা, রহমত উল্লাহ সেন্টু, সফিকুল ইসলাম শফিক, জাহিদুল ইসলাম সোহেল। ২০১৫ সালে মতিউর রহমান, ওয়াকিলুর রহমান, খোকন, শফিকুল, আনিসুর রহমান, ওসমান গণি, আমিনুল মল্লিক, সাদেক আলী মিঠু, তৌহিদুর রহমান, তোফায়েল আহমেদ মিলন। একই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না এবং ১০ মার্চ বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। মান্নাকে এক দিন পর গুলশান থানার পুলিশ গ্রেপ্তারের কথা জানায়। পরে তিনি মুক্তি পান। সালাহউদ্দিনকে দুই মাস পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে পাওয়া যায়। তিনি ভারতে আছেন।


নিখোঁজের তালিকায় আছেন ২০১৬ সালে রাজিবুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন, আশফাক আযম আপেল, কামরুজ্জামান সাগর, রশিদ গাজী, ইয়াসিন তালুকদার। ২০১৭ সালে রিশাদ এলাহী চৌধুরী, মিনহাজ ইয়ামিন জিবরান। ২০১৮ সালে মাহমুদা হাবিবা, কামাল আহমেন, ইসমাইল হোসেন মানিক। ২০১৯ সালে হাসান মামুন, জহিরুল হক খন্দকার, খোরশেদ আলম পাটোয়ারী, সৈয়দ আকিদুল আলী, মুকুল হোসেন এবং ২০২০ সালে দীপক ভৌমিক।


আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের গড়া ‘মায়ের ডাক’ নামের সংগঠনের আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এক বছর আগে জাতিসংঘ যে তালিকা দিয়েছিল, সে তালিকার কতটুকু খোঁজ নিয়েছে পুলিশ? আবার আরেক তালিকা। এটাও আগেরটার মতো পড়ে থাকবে। 

সানজিদা ২০১৩ সালে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ