আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচাল করে অনির্বাচিতদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে সংগঠনের তৃণমূলকে শক্তিশালী করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী বৈঠকে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, শেখ হাসিনা তাঁদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘শুধু আমেরিকা নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী। তাদের সবাইকে দেখিয়ে দিতে হবে, আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।’
বিএনপিসহ কিছু দল নির্বাচনকে পণ্ড করার চেষ্টা করছে বলে বৈঠকে নেতাদের জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এটা মোকাবিলা করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে। এর বিপরীতে আমাদের কাজ হলো সুষ্ঠু নির্বাচন করা।’
নেতাদের উদ্দেশে দলীয় সভাপতি বলেন, ‘আগের ভোট হবে না। যারা আগের ভোটের স্বপ্ন দেখছ, তাদের ভোট করার দরকার নাই। আগের এমপি এবারও মনোনয়ন পাবে, সেই চিন্তা বাদ দাও। রিপোর্ট দেখলেই আমি বুঝি কীভাবে করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমেরিকা আমাকে উৎখাত করতে চায়।’ সিটি নির্বাচনের মতো প্রয়োজনে সংসদ নির্বাচনেও কেন্দ্রে ক্যামেরা থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আসবে না বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কিন্তু নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচন অনাস্থা প্রকাশ করে অনির্বাচিত সরকার বসাতে চায় তারা। তবে আমাদের নেতা–কর্মীদের নেতৃত্বে সেটা ওভারকাম করতে হবে।’
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, দলীয় সভাপতি তাঁদের জানান, ভোটের মাধ্যমে তাঁকে সরানো সম্ভব হবে না জেনেই এখন তাঁকে এবং তার সরকারের অর্জনকে ‘পচাতে’ একটি পক্ষ মাঠে নেমেছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর জবাব দেওয়ার জন্য নেতা–কর্মীদের নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে সরকারে অর্জন এবং বিএনপি জোটের অপকর্মের কথা তুলে ধরতে বলেন।
বৈঠকে বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি সে ব্যাপারে বলেন, ‘আমি যখন প্রার্থী দিয়েছিলাম তখন মনোনয়ন বোর্ডের কেউ সমর্থন করেনি। কিন্তু বিজয়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে আমি ঠিক ছিলাম।’
এ সময় স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নেত্রী, আমি মনে মনে সমর্থন করেছিলাম। তখন শেখ হাসিনা বলেন, যে লোক মনোনয়ন বোর্ডে বসে মনে মনে কথা বলে তাদের তো বোর্ড মেম্বার করাও ঠিক হয় নাই!’
এ সময় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘গণভবন এসে খাওয়া ও বসার জন্য বানানো হয় নাই। নিজের এলাকায় যাও। সরকারের উন্নয়ন চিত্র মানুষের ঘরে ঘরে তুলে ধরো।’
দলের তৃণমূলকে আরও সুসংগঠিত করার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। তিনি আওয়ামী লীগ সরকার যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম করেছে সেগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরার নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে বিএনপির সময় তারা কীভাবে দেশ পরিচালনা করেছে, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরার পরামর্শ দেন।
কাদা ছোড়াছুড়ি নয়
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূলের বিভিন্ন এলাকার নেতাদের কোন্দলের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে দলীয় সভাপতি নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি না করার নির্দেশনা দেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এমপিদের শত্রু হিসেবে গণ্য করেন। পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে দল ও সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত না করার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।
সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাইকে এলাকায় যেতে হবে। কেউ যদি মনে করেন ঢাকায় বসে মনোনয়ন পেয়ে যাবেন এবং জয়ী হবেন, তাহলে ভুল করবেন।’ স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সংসদ সদস্যের কোনো ঝামেলা থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সময় বেশি নেই। এখনই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
সাংগঠনিক প্রতিবেদন
বৈঠকে আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক তাঁদের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন। সেখানে তাঁরা কোন জেলার কী অবস্থা সেটি জানান। কোথায় কোথায় সমস্যা আছে সেটি জানান। কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্ধান্ত জানান। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে আর কোনো ইউনিটের (ওয়ার্ড থেকে জেলা) সম্মেলন না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে যেসব ইউনিটের সম্মেলন হয়েছে তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি, তা দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বৈঠকে খুলনা বিভাগের প্রতিবেদনে ঝিনাইদহের শৈলকূপায় একটি হিন্দু মন্দির নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতার ছেলের সঙ্গে ঝামেলার তথ্য উঠে আসে। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের ওপর দলীয় নেতাদের কারও কোনো জুলুমের বিষয় বরদাশত করা হবে না। তাদের জায়গা আওয়ামী লীগে হবে না।’ যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে বাদ দেওয়ার জন্য বলেন শেখ হাসিনা।
এদিকে বৈঠকে তৃণমূলের কমিটি গঠনের সময় পুরোনো ও ত্যাগীদের রাখার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পুরোনোদেরও রাখতে হবে, নতুনদেরও জায়গা দিতে হবে। তবে হাইব্রিড কাউকে দলে জায়গা দেওয়া যাবে না।’
0 মন্তব্যসমূহ