তখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু করেনি জামায়াত। তবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ভরে কর্মী-সমর্থকদের একটি বড় অংশ তখন রাস্তায়। বেলা সোয়া একটার দিকে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের এক নেতার ফোন। জানতে চাইলেন, পুলিশ আছে কি না, তাদের ভূমিকা কী। তারপর একটু বিস্ময়মাখা কণ্ঠে জিজ্ঞাসা, এটি কি সমঝোতার ইঙ্গিত?
বলছিলাম, ১০ জুনের সমাবেশের কথা। সেদিন একটি ঘরোয়া সমাবেশের অনুমতি পেয়ে জামায়াতে ইসলামী ঢাকায় নীরবে যে বড় জমায়েত করল, সেটি এখনো রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয়। এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে দলটি দীর্ঘদিন পর আবার আলোচনায় এল। প্রায় এক দশক ধরে অনেকটা ‘নিষিদ্ধ’ থাকার পর হঠাৎ জামায়াতকে সরকার কীভাবে সমাবেশের অনুমতি দিল, এটি আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ সূত্রপাত না কি এই সমাবেশ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির ‘সুফল’—এমন নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এ বিষয়ে জামায়াত যা বলছে, তার মোদ্দাকথা হচ্ছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির সুফল। আর সরকারের দিক থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ পাঁচজন মন্ত্রী ও নেতা ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেছেন। এর মধ্যে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে’।
ফলে সরকারের ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি, এই দুটিই জামায়াতের প্রকাশ্যে আসার নেপথ্যে কারণ কি না, এ নিয়েই চলছে নানা আলোচনা।
পর্যবেক্ষকেরাও বলছেন, কার্যত ‘রাজনৈতিক কৌশল’ থেকেই সরকার জামায়াতকে এই সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। এর পেছনে সরকারের দুটি লক্ষ্য থাকতে পারে। প্রথমত, এর মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতের সঙ্গে সরকারি মহলের যোগাযোগের একটি ‘দরজা’ খোলা। অন্যটি হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিরই প্রভাব—যার কারণে জামায়াত সহজেই সমাবেশের অনুমতি পেয়ে গেছে।
বিরোধী দলে থাকলে নির্যাতন-নিপীড়ন হয়। কিন্তু জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার মুহূর্ত থেকে যত দিন জামায়াত তার নিজস্ব গতিতে চলবে, তত দিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
শফিকুল ইসলাম, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি।
খবর প্রথম আলোর।
0 মন্তব্যসমূহ