আন্দালিব রহমান পার্থ বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) সভাপতি, ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং ঢাকায় অবস্থিত ব্রিটিশ স্কুল অব ল-এর অধ্যক্ষ। সেন্ট যোসেফ ও ল্যাবরেটরি স্কুলে পড়ালেখা করেছেন। ১৯৯১ সালে চলে যান ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ডে এ-লেভেল করেন। ১৯৯৫ সালে এলএলবি করেন সেখানেই। ১৯৯৭ সালে বার অ্যাট ল করে দেশে ফেরেন। ইংল্যান্ডের উলভারহ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। দেশে ফিরে চার বছর কাজ করেন প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের সঙ্গে। ২০১১ সাল থেকে রাজনীতিতে নিয়মিত। পিতা নাজির রহমান মঞ্জুর মৃত্যুর পর হাল ধরেন দলের। অল্প দিনের মধ্যে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ভিসা নীতি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিতে অনীহাসহ নানা বিষয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা।
কালবেলা : বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের ৫১ বছর পেরিয়ে গেল। অন্য অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি করলেও রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কেন এগোতে পারছে না?
আন্দালিব রহমান পার্থ : রাজনীতি ও গণতন্ত্রে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ সংকীর্ণ দলীয় মানসিকতা এবং ক্ষমতার লড়াই। ক্ষমতায় আসীন ব্যক্তিরা ক্ষমতায় থেকে এমন কিছু কাজ করে ফেলেন যে ক্ষমতা ছাড়া তাদের জন্য অনেক ভীতির ব্যাপার হয়ে যায়। কারণ ক্ষমতায় থাকার সময় তারা ক্ষমতাকে অনেক খারাপভাবে ব্যবহার করেন। ক্ষমতাসীনরা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করে না। তখন তাদের আসল চেহারা উন্মোচিত হয়ে যায়। ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে যা যা করা প্রয়োজন, তারা সেটাই করে। তারা আর অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করে না।
কালবেলা : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আপনারা নির্বাচনে যাবেন না বলে জানিয়েছেন। সরকার বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে সমাধান আসবে কীভাবে?
আন্দালিব রহমান পার্থ : ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ নির্বাচন। বিশ্বের কোনো দেশে এমন নির্বাচন হয়েছে কিনা, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। অনেকে হয়তো বলেন না; তবে বিদেশি রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগেরও অনেকে বলেছেন, যারা আওয়ামী জোটের সঙ্গে আছেন, তারাও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন থেকেও বলা হয়েছে— ওই নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। এ পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন যে কারণে আমরা করতে চাই, সেটাও হবে না। আমরা আশা করি, সরকার পরিস্থিতি ভালো করতে প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে।
কালবেলা : বিএনপিসহ আপনাদের ছাড়া নির্বাচন হলে সেটি কি গ্রহণযোগ্য হবে?
আন্দালিব রহমান পার্থ: বিএনপি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। তাদের ছাড়া কোনো সংসদ নির্বাচনই গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি প্রধান এখানে। আমরা যারা ছোট ছোট দল, তারা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করি, তাহলে ভোটাররা আসবে না। রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর মানুষের বিশ্বাস-আস্থা ও প্রত্যাশা এমন অবস্থা চলে গেছে যে বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে গেলেও সে পরিমাণ মানুষ ভোট দিতে যাবে না। কারণ নির্বাচনের ফলাফল মানুষ আগে থেকে জেনে গেছে কী হবে। এই কারণে সংসদ সদস্য নির্বাচন, সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে ২০-৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ছে না। মানুষই রাজনীতিবিমুখ ও ভোটবিমুখ হয়ে গেছে।
কালবেলা : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিকল্প কোনো পরিকল্পনা আপনাদের আছে কী?
আন্দালিব রহমান পার্থ : না, আমরা এ ব্যাপারে এখনো বসিনি বা আলোচনা করিনি। ফোকাসটা আমরা এক জায়গায় রাখছি। তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। অল্টারনেট কোনো ফোকাসে আমরা যাই নাই।
কালবেলা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনারা কারও সঙ্গে জোটবদ্ধ হবেন?
আন্দালিব রহমান পার্থ : সেটা সময় বলে দেবে।
কালবেলা : সম্প্রতি আপনি ইংল্যান্ডে গিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। কী আলোচনা হয়েছে তার সঙ্গে? নির্বাচনে যাওয়া বা জোটে যোগদানের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়েছে কি?
আন্দালিব রহমান পার্থ : এসব ব্যাপারে কথা হয়নি। আমার সঙ্গে বিএনপির অনেক বছরের সম্পর্ক। বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে আসার অন্যতম কারণ ছিল, বিএনপি সবার সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছিল না। পরে দেখা গেল, বিএনপি নিজেই জোট ভেঙে দিয়েছে এবং সংসদ থেকে বের হয়ে গিয়েছে। আমি যেটা আগে করেছি, বিএনপি সেটা পরে করেছে। আমি সব সময়েই তারেক রহমান ভাইয়ের কাছে যাই, তার সঙ্গে কথা হয় ক্যাজুয়ালি। এবারও কথা হয়েছে। রাজনীতি নিয়েও কথা হয়েছে। এর মধ্যে আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি, তাতে নির্দলীয় সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।
কালবেলা : ২০১৪ সালের একটি ফমুর্লা নিয়ে আবারো আলোচনা চলছে। যেমন সব দলকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন। সেবার আপনার সাড়া দেননি। এবার কি এমন আলোচনায় সাড়া দেবেন?
আন্দালিব রহমান পার্থ : এই বিষয়গুলো আরও অনেক পরের ব্যাপার, হাইপোথেটিকাল কথা বলে লাভ নেই। আপাতত এই পর্যন্ত আছে যে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেবে না, আর বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কিছু নেবে না। আর আমেরিকা বিশ্বাস করে যে এই সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাই এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
কালবেলা : আপনাদের অভিযোগ অনুযায়ী প্রশাসনে বিভিন্ন লেয়ারে আওয়ামী লীগের নিজস্ব লোক আছে, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে 'নেক্সাস' তৈরি করা হয়েছে। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসেও, তাহলে কি এমন পরিস্থিতির উন্নতি হবে?
আন্দালিব রহমান পার্থ : আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, তারা সবাই ক্ষমতার লোক। এরা কারও নিজের লোক না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে তারা কেউ থাকবে না।
কালবেলা : এই সরকারের সময় একটা গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে, যারা ক্ষমতালোভী বলে অনেকের দাবি। তারা দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা কি চাইবে ক্ষমতা পরিবর্তন হোক?
আন্দালিব রহমান পার্থ : কে চায়-না চায় কিছু আসে যায় না। দিনশেষে জনগণ কী চায়, সেটা ম্যাটার করে। অবশ্যই তারা চাইবে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে। এ দেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ, ১২ কোটি ভোটার। ভোটাররা ঠিক করবে এই দেশের ভবিষ্যৎ সামনে কী হবে। আমাদের কাজ হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। নেতৃত্ব ও নেতা ভোটাররা বেছে নেবে।
কালবেলা : আপনার কথায় মনে হচ্ছে, বিদেশি চাপের চেয়েও বেশি জরুরি জনগণের আন্দোলন?
আন্দালিব রহমান পার্থ : বিদেশিরা পরামর্শ দেবে, নিষেধাজ্ঞা দেবে। কিন্তু বিদেশিরা আমাদের সমস্যা সমাধান করে দিয়ে যাবে না। বাংলাদেশের সমস্যা বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেই সমাধান করতে হবে।
কালবেলা : এ ক্ষেত্রে জনগণের পালস কেমন অনুভব করছেন?
আন্দালিব রহমান পার্থ : জনগণ পালস অ্যান্টি-গভর্নমেন্ট। এটা হওয়া স্বাভাবিক। আপনি দুর্নীতি দেখেন, জিনিসপত্রের দাম দেখেন— এসব মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না। সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলছে। কিন্তু গুণগত পরিবর্তন তো হয়নি। জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতি মানুষকে সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত করেছে। তারপর রয়েছে বলগাহীন দুর্নীতি। মানুষ যখন পত্রিকা খোলে তখন দেখে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। দুর্নীতিবাজরা আবার সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ঘোরাঘুরি করছে। তাদের বিচার হচ্ছে না। দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতারা আদালতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ড জনগণের বিপরীতে। মানুষ ভোটও দিতে পারছে না, কথাও বলতে পারছে না। আজ যার বয়স ৩২-৩৩ বছর, দুইবার ভোট দিতে পারেনি। এই বিষয়গুলো গভীর চিন্তার ব্যাপার।
কালবেলা : আগামী নির্বাচন যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়, তাহলে কি আমাদের নির্বাচনের কাঠামো ঠিক হয়ে যাবে নাকি এ ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন?
আন্দালিব রহমান পার্থ : সরকার কাঠামো তৈরি করুক আর যা-ই করুক না কেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে মানসিকতা থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনের কাছে ওই জনবল বা ইকুইপমেন্ট নেই। তারা কিছু করতে পারে না।
কালবেলা : যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা কি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়?
আন্দালিব রহমান পার্থ : না চাওয়ার পরেও আমাদের এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। ’৯১-এ হয়েছে, ’৯৬-এ হয়েছে, ২০০১ সালে হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন কোনোদিন হয়নি।
কালবেলা : শুধু কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমেই এর সমাধান আসবে?
আন্দালিব রহমান পার্থ : তত্ত্বাবধায়ক সরকারই অনেক বড় একটা সমাধান। এটা পরীক্ষিত। যখনই এ দুইটা রাজনৈতিক দল একটা নো রিটার্ন পয়েন্টে চলে গিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসাতে জনগণ সেটাকে গ্রহণ করেছে। প্রত্যেকবারই সেটা প্রমাণিত। যে-ই যত হারার পর বলুক না কেন, এটা ঠিক হয়নি— রাজনীতিতে এটা একটা রেটোরিক। এবার জনগণই বলে দিয়েছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন ঠিক হয়নি।
কালবেলা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?
আন্দালিব রহমান পার্থ : এখনো নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতিতে যাচ্ছি না। সময়েরটা সময় বলা যাবে।
কালবেলা : সরকারের দুর্নীতি নিয়ে আপনি সব সময়ই সোচ্চার। আপনারা কোনো সময়ে ক্ষমতায় গেলে এদের বিচার করবেন কি?
আন্দালিব রহমান পার্থ : আমরা ক্ষমতায় গেলে এগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। দুর্নীতিবাজ দেশে আছে বা থাকবে, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু দেশের টাকা যারা লুট করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর একটা সমাধান নতুন সরকারকে করতে হবে। এই সরকার করবে না। বড় বড় গ্রুপ ও ব্যক্তিরা বিদেশে লাখো কোটি টাকা পাচার করছে, যা পত্র-পত্রিকায় উঠে আসছে। অনেকেই বিদেশে হোটেল বানাচ্ছে, বিল্ডিং বানাচ্ছে, জমি কিনছে। সরকার এগুলো নিয়ে কোনো কথা বলে না। এই টাকাগুলো ফেরত আনতে হবে। এই টাকাগুলো দেশের টাকা। যে কোনো সরকার আন্তরিক হলে এটা সম্ভব।
কালবেলা : যাদের কাছ থেকে এই টাকা ফেরত নিয়ে আসতে হবে তারা তো অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বড় একটি প্রভাব রাখে...
আন্দালিব রহমান পার্থ : আপনি রাজনীতিতে যত প্রভাব রাখেন না কেন, বিচার একদিন হবেই। এখন সময় এসেছে 'ইকোনমিক ট্রিজন 'আইন পাশ করা। যাদের কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ব্যাহত হয়, বহির্বিশ্বে দুর্নাম হয়, তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করতে হবে। আমি যদি কোনোদিন ক্ষমতায় যাই, তাহলে আমিই এই উদ্যোগ নিব। অর্থনৈতিক রাষ্ট্রদ্রোহিতা নামে একটা আইন থাকা উচিত। এটা আমেরিকায় ছিল। এটা আপনার কর্মকাণ্ডের জন্য যদি দেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে খারাপ হয় তাহলে এটি প্রযোজ্য হবে। আফ্রিকান দেশগুলো, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশের নাম শুনলেই মনে হয় এখানে অনেক দুর্নীতি, এখানে যাওয়া যাবে না। এমন খারাপ ভাবমূর্তি বাংলাদেশের হয়ে গেলে বিদেশি লোকেরা এই দেশে আসতে চাইবে না। তখন যে মানুষগুলোর জন্য বিদেশিরা এই দেশে আসতে চাইবে না, সেই মানুষগুলোকে বিচারের আওতায় আনতে এই আইন পাশ করা উচিত। গুটিকয়েক মানুষের জন্য এটা হচ্ছে, তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। তারা সাংঘাতিকভাবে অর্থনৈতিক রাষ্ট্রদ্রোহী। দেশের টাকা লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে হোটেল বানাবেন, ব্যাংক খালি করে দিবেন, দেশে ডলার সংকট হবে। এটা আসলে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
কালবেলা : তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে একটা অনীহা তৈরী হয়েছে। রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মকে কী আগ্রহী করে তোলা যাবে?
আন্দালিব রহমান পার্থ: প্রথমেই তরুণ প্রজন্মের সামনে রাজনৈতিক আইডল তৈরি করতে হবে। তরুণ প্রজন্মের ভালো রাজনীতিবিদ লাগবে যাদেরকে তারা অনুসরণ করবেন। আজ যারা মুরব্বী রাজনীতিবিদ আছেন, আমাদের থেকেও ১৫-২০ বছরের সিনিয়র তারা বড় বড় রাজনীতিবিদদের সান্নিধ্য পেয়েছেন। তাদেরকে তারা আইডল বা হিরো হিসাবে দেখতেন। আজ তরুণ সমাজের হিরো পরিবর্তন হয়ে গেছে। আর পুঁজিবাদের উত্থানের কারণে তরুণ সমাজ রাজনীতি বিমুখ হয়ে অর্থ ও খ্যাতির পেছনে ছুটছে। রাজনীতি কুলষিত হওয়ায়ও তরুণ প্রজন্ম মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। তরুণ সমাজ অনেক কম সময়ে অনেক সাকসেসফুল হওয়ার চেষ্টা করে। এমন প্রেক্ষাপটে তরুণ সমাজকে রাজনীতিতে ফেরত আনতে হবে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ভালো মেধাবী তরুণরা রাজনীতিতে আসলে রাজনীতির চেহারা বদলে যাবে। রাজনীতিবিদদের মানুষ খুব একটা ইতিবাচক চোখে দেখে না। আর ইতিবাচক দেখে না বলেই তরুণ সমাজ রাজনীতিতে আসতে চায় না। তরুণ সমাজ এখন সাকিব আল হাসান হতে চায়, বলিউডের হিরো বা মার্ক জাকারবার্গ— তাদের দ্বারা অনেক বেশি আকৃষ্ট। এখন আর কেউ বঙ্গবন্ধু বা জিয়াউর রহমান হতে চায় না। এমন পরিস্থিতিতে তাদের মোটিভেট করার মত মানুষ লাগবে যাদের দেখে তরুণ সমাজ রাজনীতিতে আসতে চাইবে। সঠিক রাজনীতির চর্চা থাকলে ভালো তরুণ জনগোষ্ঠি রাজনীতিতে আসবে।
কালবেলা : ১/১১-এর মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধিক সময়কাল ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাহলে সেটি কি গণতন্ত্রের জন্য সুখকর হবে?
আন্দালিব রহমান পার্থ: সেটা নির্ভর করে সেই সরকারের ইচ্ছা ও আকাঙ্খা কী, তার উপর। গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য তারা আসছেন না তারা নিজেরা নিজেদের জন্য আসছেন, সেগুলোর উপর নির্ভর করে। এগুলো আসলে অনেক পরের কথা। আমি চাই বড় দুইটা রাজনৈতিক দল আলোচনায় বসে এই সমস্যাটার সমাধান করুক।
কালবেলা : আলোচনায় বসবে কী করে? বিএনপি যে শর্তগুলো দিয়ে রেখেছে, সেগুলো আওয়ামী লীগ মানছে না। আবার আওয়ামী লীগ যেগুলো বলছে তা বিএনপি মানছে না......
আন্দালিব রহমান পার্থ: বিএনপির দাবি না মানলে আওয়ামীলীগের একটা ভালো সমাধান দেওয়া উচিত। সমাধানটি যদি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তখন বিএনপির ওপর একটা রাজনৈতিক চাপ আসবে। বিএনপি যেহেতু একটা কথা বলেছে আওয়ামীলীগেরও উচিত আরেকটু নমনীয় হওয়া। কিন্তু বিএনপি যে দাবিটা করছে সেটা জনগণের দাবি, আমাদেরও দাবি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্দলীয় সরকারই আলটিমেট ব্যবস্থা। বিদ্যমান অবস্থায় সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই।
কালবেলা : সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে বিএনপি কোন অংশগ্রহণ করছে না। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কোথাও কোথাও জিতছে। এটা কোনো বার্তা কী?
আন্দালিব রহমান পার্থ: এসব নির্বাচন ক্ষমতার পট পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে না। ফলে সেগুলো নিয়ে বিএনপি বা আমরা চিন্তিত নই। এই নির্বাচন সুষ্ঠু হোক না হোক সেটা বিষয় না। এমন সুষ্ঠু নির্বাচন ২০১৩ সালেও হয়েছে আবার ১৪ সালে ভোট ডাকাতি হয়েছে। এগুলো নিয়ে আমরা চিন্তিত না। আমরা এখনো নির্দলীয় তত্তাবাধায়ক সরকারের দাবিতেই আছি।
0 মন্তব্যসমূহ