গৌতম কুমার : ১৫ জুলাই বে সরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ-এনটিআরসিএ সর্বোচ্চ ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফল প্রকাশ করে।ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেলো তাদের প্রায় অর্ধেকই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা তুলনামূলক বেশি নম্বরধারী।
আমরা বদলি প্রত্যাশি শিক্ষক গ্রুপ ৭১ এর পক্ষ থেকে হাইকোর্টের বদলি রীটে উল্লেখ করেছিলাম,বদলি প্রত্যাশি ইনডেক্সধারী শিক্ষক-কর্মচারীগণকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আগে বদলির সুযোগ দিতে ও গণবিজ্ঞপ্তিতে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ দিতে।তখন যে পদগুলো শূন্য হবে সেগুলো এবং নিয়মিত শূন্য পদ সমন্বয় করে পূর্ণাঙ্গ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের।তখন নিবন্ধনধারীগণ সকল শূণ্য পদেই নিয়োগের সুযোগ পেতেন।
কিন্তু এনটিআরসিএ সেটা করেনি। ফলে কর্মরত শিক্ষকগণের সাথে বেকার নিবন্ধনধারীগণের প্রতিযোগিতা হলো। সেক্ষেত্রে বেশি নম্বরধারী কর্মরত শিক্ষকগণই তুলনামূলক বেশি সুযোগ পেলেন।কম নম্বর প্রাপ্তগণ বেকারই থেকে গেলেন হাজার হাজার টাকা খরচ করেও এবং তাদের মধ্যে হতাশা থেকেই গেলো।
অন্যদিকে কর্মরত শিক্ষকগণ অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাওয়ায় আবারও শিক্ষক সংকট থেকেই গেলো এবং শীঘ্রই এই শূন্য পদগুলো পূরণ হবে না।
আমার পরিচিত একজন শিক্ষক ৪০০ আবেদন করে একটি মাদ্রাসায় প্রভাষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
আবার এক বড়ভাই ৫০০ আবেদন করেও কোথাও সুযোগ পাননি। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৫৪ হাজার পদে আবেদন করেছেন প্রায় ৮১ লাখের বেশি নিয়োগ প্রত্যাশী এবং এনটিআরসিএ আয় করেছেন প্রায় ২০০ কোটি টাকা। অবস্থাদৃষ্টে সিলেটের গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত একটি কৌতুক মনে পড়লো।
ক্রেতা পণ্য কেনার পর দোকানদারের কাছে জানতে চাইলো কত টাকা হয়েছে? দোকানদার বললেন,৯ ও ৬ মিলে ১৮ টাকা,৩ টাকা কমে ১৫ টাকা দিয়ালাও!
১-১২ তম ৩৫+ নিবন্ধনধারীগণ নিয়োগের রায় পেয়েও শেষ পর্যন্ত নিয়োগের সুপারিশ পাননি আপীল বিভাগে হেরে যাওয়ায়। শীত,গরম,বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেক সময়, অর্থ ও শ্রম দিয়ে আইনি লড়াই চালিয়েছেন।
তাদেরকে অবজ্ঞা করা ঠিক হয়নি।তারাও এদেশের নাগরিক। আমাদের মনে রাখা উচিৎ তারা তাদের সময়ের মেধাবী। তখন ইংরেজিতে পাশ করা কঠিন ব্যাপার ছিলো। তাছাড়া তখন প্রতিযোগিতা না থাকায় তারা শুধুমাত্র পাশ করার জন্যই নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সাধারণত বাংলাদেশের সকল পেশার পরীক্ষায় ভাইভায় উত্তীর্ণ হলেই নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হন কিন্তু একমাত্র এনটিআরসিএর ক্ষেত্রেই ভাইভায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও আবার হাজার হাজার টাকা খরচ করে শিক্ষক হওয়ার জন্য আবেদন করতে হয় যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও বেদনাদায়ক। একজন বেকারই জানেন এর মর্মবেদনা। ভাইভায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের প্যানেল করে নিয়োগ দিলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। অথবা পিএসসির আদলে শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন করে একটিমাত্র আবেদনপত্রের আলোকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।
ইনডেক্সধারী শিক্ষকগণ সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে জানিয়ে দিয়ে গেলেন তারা কর্মরত প্রতিষ্ঠানে সন্তুষ্ট ছিলেন না এবং বদলি কতটা জরুরি।কেননা তারা বিভিন্নভাবে হয়রানির স্বীকার হতেন এবং তারা নিজ জেলা হতে ২০০-৭০০ কিলোমিটার দূরে শিক্ষকতা করতেন।
একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান জানালেন,তার প্রতিষ্ঠান থেকে
৬ জন ইনডেক্সধারী শিক্ষক অন্য প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ পেয়েছেন এবং তার বিপরীত এসেছেন মাত্র একজন শিক্ষক। তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে কিভাবে?
যেহেতু মহামান্য হাইকোর্টের বদলির রায় ইনডেক্সধারী সকল শিক্ষক-কর্মচারীগণের পক্ষেই এসেছে,সুতরাং আমাদের প্রত্যাশা কর্তৃপক্ষ দ্রুত বদলির বিষয়টি সুরাহা করবেন।
পরিশেষে, যারা শিক্ষক হওয়ার সুপারিশ পেয়েছেন তাদেরকে অভিনন্দন জানাই আর যারা সুযোগ পাননি তাদের প্রতি সমবেদনা রইলো।
0 মন্তব্যসমূহ