কুন্দুজের জীবন ঘাঁটি এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে
আজ (মঙ্গলবার) প্রারম্ভিক প্রেক্ষাপটটি আফগানিস্তানের দক্ষিণ-সীমান্তিক ফারাহ প্রদেশের ফারাহ হারাতে হয়েছে। এই নিয়ে গত ৫ আগস্ট প্রাদেশিক রাজধান সরকার বাহিনীকে হিট করতে হবে
আল-জাজিরা শহর, শহর দখল মধ্যবর্তী আফগানিস্তানের প্রতিবেশী মানুষের সাথে এক সপ্তাহের কম সময়ে আফগানিস্তানের ৩৪ টি প্রেডিক্টারের শহর ৭ টি দখল করে নিলো তারা।
ফারাহর প্রাসাদিক সাংসদ শাহলা আবুবর এএফপিকে লেখক: রায় (আজ) তারা জর্নর কার্যালয় ও সদর দপ্তর দখলে নিয়ে আসছে।
আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর মাজার-ই-শরীফেরও দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে তালেবান! সরকারী বাহিনী অবশ্য শহরটি রক্ষায় প্রাণপণ লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া, হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্কর গাহ, কান্দাহারসহ আরো বেশ কয়েকটি অঞ্চলের দখল নিয়ে বিদেশী সেনা ও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে লড়াই চলছে তালেবানের। তালেবানের হামলার মুখে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণী আঞ্চলিক কমান্ডারদের কাছে সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, আমেরিকা গণী সরকারকে নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে বলেছে!
এদিকে, দীর্ঘ ১০ বছর কুন্দুজে জার্মান যে সেনাঘাঁটিটি ছিলো, তা এখন তালেবানের দখলে। তালেবান কুন্দুজ উদ্ধারের পর, কোনো কোনো মহলে আলোচনা শুরু হয়েছিলো যে, জার্মানি ফের সেখানে সেনা পাঠাতে পারে। জুনে সেখান থেকে জার্মান শেষ সেনাকে ফেরানো হয়। কিন্তু জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী একাধিক টুইট করে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত জার্মান সেনা ফেরত পাঠানোর প্রশ্ন নেই। তবে যেভাবে আমেরিকার নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নিয়েছে, তার সমালোচনা করেছেন তিনি।
আফগানিস্তানের আঞ্চলিক অন্তত ৭টি রাজধানী এখন তালেবানের হাতে। কুন্দুজ অবশ্য তারা শনি-রবিবারেই উদ্ধার করে। উত্তর আফগানিস্তান থেকে কাবুল ঢোকার গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট কুন্দুজ। এখানেই দীর্ঘ ১০ বছর জার্মান সেনাঘাঁটি ছিলো। গত ১০ বছরে জার্মান সেনা এ অঞ্চল নিজেদের সম্পূর্ণ আধিপত্যে বজায় রেখেছিলো। কুন্দুজ দখল করা মানে – কাবুলের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেলো তালেবান। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহলে জল্পনা শুরু হয়েছিলো যে, জার্মানি ফের কুন্দুজে সেনা পাঠাতে পারে। আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, কুন্দুজসহ গোটা আফগানিস্তান থেকে যে রিপোর্ট আসছে, তা দুঃখজনক। জার্মান বহু সেনা রক্ত দিয়ে কুন্দুজকে রক্ষা করেছিলো। আমরা ওখানে অনেক লড়াই করেছি। এতোদিনের পরিশ্রম নষ্ট হয়েছে। এ ঘটনা থেকে ভবিষ্যতে বিদেশে কোনো মিশনে গেলে, আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। জার্মানি ঐ অঞ্চলে কতো ভালো কাজ করেছে, তার তালিকাও তিনি দিয়েছেন। জার্মানি সেনা ফেরত পাঠাবে কি-না, এ প্রশ্নের উত্তর তিনি ঘুরিয়ে দিয়েছেন এভাবে – জার্মান সংসদ কি পুরো এক প্রজন্মের জন্যে আফগানিস্তানে সেনা পাঠাতে পারবে? না পারলে, সেনা ফেরত আনার পরিকল্পনাই ঠিক ছিলো। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, তালেবানকে ধ্বংস করতে আরো লম্বা সময়ের দরকার ছিলো। বাস্তবে যে সময় পাওয়া যায়নি।
বাস্তব পরিস্থিতির জন্যে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দিকে আঙুল তুলেছেন। তার বক্তব্য – ট্রাম্প তালেবানের সাথে সমঝোতা না করলে, পরিস্থিতি আজ এমন হতো না। আগস্টের ভেতরে আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সব সেনা সরিয়ে নেবে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের ধারণা, তখন পর্যন্ত তালেবান কাবুলের দিকে যাবে না। তবে যেভাবে তারা এগোচ্ছে, তাতে কিছুদিনের ভেতরেই তারা কাবুল দখল করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আমেরিকা, রাশিয়াসহ বিশ্বের একাধিক দেশ তালেবানকে জানিয়েছে, লড়াই বন্ধ করে রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে। কিন্তু যে গতিতে তালেবান আফগানিস্তানের আঞ্চলিক রাজধানীগুলো দখল করছে, তাতে এখন তারা রাজনৈতিক সমঝোতায় যাবে না বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারের সাথেও তারা ক্ষমতা ভাগাভাগি করবে বলে মনে করছেন না আফগান বিশেষজ্ঞরা।
ওদিকে, মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের (পেন্টাগন) মুখপাত্র জন কিরবী গতকাল (সোমবার) বলেছেন: তালেবানের একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেয়াতে আমেরিকা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তবে বিদ্রোহী এ গোষ্ঠীটির সাথে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর লড়াই’র ক্ষমতা আছে বলে মনে করে আমেরিকা। এরা তাদের সামরিক বাহিনী। এগুলো তাদের প্রাদেশিক রাজধানী, তাদের জনগণকে তাদেরই রক্ষা করতে হবে। এ বিশেষ মূহুর্তে এ অবস্থা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে ইচ্ছুক কিনা, তা তাদের নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে।
আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো লড়াই চালিয়ে যেতে না পারলে, আমেরিকার সামরিক বাহিনী কী করতে পারে – এমন প্রশ্নে কিরবী বলেন: বেশী কিছু করার নেই।
পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের প্রথমদিকে মার্কিন সামরিক বাহিনী বাইডেনকে সতর্ক করে বলেছিলো – সেনা প্রত্যাহার করে নিলে, প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর পতন হতে পারে। কিন্তু তালেবান এতো দ্রুত সেগুলোর কয়েকটির দখল নিয়ে নেয়ায় তারাও বিস্মিত হয়ে আছেন! শুক্রবার থেকে রবিবারের ভেতরে তালেবান প্রাদেশিক ৩টি রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সময় আমেরিকা কিছু বিমান হামলা চালিয়েছিলো। একটি হামলায় শুধু সামরিক কিছু সরঞ্জাম ধ্বংস হয়েছিলো।
এদিকে, আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট জানিয়েছে, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্যে তিন দিনে বেশ কয়েক দফা বৈঠকের শিডিউল চূড়ান্ত করা হয়েছে। আফগানিস্তানে দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতির বিষয়ে যৌথ আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া তৈরির জন্যে জালমাই খালিলজাদ দোহা যাবেন। বৈঠকে মার্কিন এ দূত দোহায় বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধির সাথে আলোচনায় বসবেন – যারা সহিংসতা হ্রাস ও যুদ্ধবিরতির জন্যে চাপ দেবেন এবং জোর করে চাপানো সরকারকে স্বীকৃতি না দিতে অঙ্গীকার করবে।
সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স,এএফপি,ডয়েচে ভেলে।
0 মন্তব্যসমূহ