বিশেষ প্রতিবেদন,ঢাকা, তাং: ০৫/০৮/২০২১ ইং।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর নিয়োগের আবেদন সিস্টেম কি আসলেই জুয়া খেলা?
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের সচ্ছতা নিশ্চিত করতে ২০০৫ সালে গঠিত হয়েছিল বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। ঐ সময়ে তাদের একমাত্র কাজ ছিল শুধু সার্টিফিকেট দেওয়া।সেই সার্টিফিকেট দিয়ে প্রার্থী ৪০ এর নম্বর পেলেই পাশ ছিল। এভাবেই চলছিল প্রথম থেকে বারোতম পর্যন্ত। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ কমিটির হাতে থাকায় নিবন্ধনধারীদের হয়রানি কমেছিল না।সেখানেও দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠে। তুলনামূলক কম নম্বর পেয়েও অনেক প্রার্থী টাকা দিয়ে নিয়োগ নেয় এবং কমিটির সভাপতি, সদস্য ও প্রধানদের নিয়োগ বাণিজ্য চলছিল বলে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।
একসময় এ ধরনের সংকট নিরসনে এনটিআরসিএ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে শুধু সার্টিফিকেট দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে বেরিয়ে এসে তারা নিয়োগের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
১৩তম থেকে উপজেলা ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করে এনটিআরসিএ কিন্তু ১-১২ তমদের রিট পিটিশনের মাধ্যমে সেটা করতে পারে নি। ১৬৬ টি রিট পিটিশনের জন্য সারা বাংলাদেশ থেকে জোরে চাপ দেওয়া হয়।তারা নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএর নীতিমালার ত্রুটি নিয়ে এ অভিযোগ করেন। কিন্তু তৎকালীন এনটিআরসিএ এর চেয়ারম্যান জনাব আশফাক এসব মামলা জটিলতা উপেক্ষা করে শিক্ষক সংকট নিরসনে ১৩তমদের কে ১-১২তমদের সাথে মেরিট লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং গনবিজ্ঞপ্তির প্রজ্ঞাপন জারি করে বর্তমান নীতিমালা সংশোধন করে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেন।
সেই স্থগিতাদেশ বাড়িয়ে এবং অন্যান্য আইনগত বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষক সংকট দূর করতে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ১ম ও দ্বিতীয় গনবিজ্ঞপ্তির প্রজ্ঞাপন করে সারাদেশে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেন। সেখানে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক আবেদন ও চয়েজ অর্ডার দিয়ে প্রার্থীদের আবেদন করতে উৎসাহিত করা হয়। কিছুটা ত্রুটিপূর্ণ থাকা সত্ত্বেও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করার চেষ্টা করছে। নারী কোটা ও নন এমপিও ভুক্ত এমপিওভুক্তির প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে অনেক প্রার্থী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।তারপর অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অনেক চেয়ারম্যান বদলি হয়ে এসেছে জল ঘোলা করে চলেও গেছে কিন্তু নিয়োগ বঞ্চিত হয়ে চরম দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছিলেন নিবন্ধিত প্রার্থীরা। ১৩তমদের একক নিয়োগের মামলা,১৬৬ টি কন্টেম্প মামলা উপেক্ষা করে ১৪ তম নিবন্ধনধারী নিয়ে দ্বিতীয় গনবিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। কিন্তু ১৩তমরা মামলা দায়ের করেন এবং উচ্চ আদালতে আপিল করলে রায় এনটিআরসিএ এর বিপক্ষে যায় এবং তাদের একক নিয়োগের বিষয়টি চ্যালেন্জ করলে তারা একক নিয়োগের চূড়ান্ত রায় পায়।
চরম দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য থেকে রক্ষা করতে যে উদ্দেশ্যে এনটিআরসিএ গঠিত হয়েছিল তা দিন দিন কলুসিত হতে থাকে।নীতি নির্ধারণী ফোরাম নীতিমালা তৈরি করতে বার বার হোঁচট খেয়ে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া সম্মুখীন হতে হয়। মামলা জটিলতা যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়।
এরপর বুড়িগঙ্গা নদীর কতো জল ঘোলা হলো কিন্তু অজুহাত একটার পর একটা দেখিয়ে নানারকম বিতর্ক যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না। এনটিআরসিএ বিষয়টি চ্যালেন্জ নিয়ে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক আবেদন দিয়ে নিয়োগ প্রথা বাতিল তো করতেই পারে নি তারউপর বদলি সিস্টেম না থাকায় উচ্চ নম্বরধারী বার বার সুপারিশ পেয়েছেন। ফলে “যে লাউ সেই কদু”।
নিবন্ধনধারী কয়েক জনের সাথে বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একজন নিবন্ধনধারী বলেন,” বিসিএসের আদলে প্রিলিমিনারি রিটেন ভাইভা পাশ করে আবার হাজার হাজার টাকা দিয়ে আবেদন করে তারপরও নিশ্চিত নয় সুপারিশ পাবো কিনা, পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও জগন্য সিস্টেম এই বেসরকারি শিক্ষক হওয়া। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অন্য কোথাও এমন সিস্টেম আছে বলে জানা নেই “!
আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন ,আমি ৫০ হাজার টাকার আবেদন করেও নিয়োগ পাইনি, আমার কি হবে,তাহলে আমি কি অযোগ্য? এনটিআরসিএ কেন আমাকে সার্টিফিকেট দিয়ে হয়রানি করছে? এর সুষ্ঠু বিচার চাই”।
কয়েকজন প্রার্থী সুপারিশ পেয়ে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ এটা খুব ভালো যে কয়েকটি আবেদন করেই এবং টাকা ছাড়াই নিয়োগ সুপারিশ পেয়েছি।এনটিআরসিএকে ধন্যবাদ আমাকে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য ” আমার মতো গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এতো টাকা দিয়ে নিয়োগ নিতে পারতাম না, আমি খুব খুশি”।
কেউ কেউ বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া সচ্ছ হওয়ায় অনেক মেধাবী শিক্ষক এখানে আসছে তবে এর বেশ কিছু নীতিমালা সংশোধন করলে আরো সুন্দর হতো ও মামলা জটিলতা থাকতো না।
ফারুক হোসাইন, প্রভাষক,লেখক, কলামিস্ট।
0 মন্তব্যসমূহ