Hot Posts

6/recent/ticker-posts

দুর্নীতির ভাইরাস থেকে জাতি কবে মুক্তি পাবে!

জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন “The world will not be destroyed by those who do evil,but by those who watch them without doing anything”। বাংলাদেশে দুর্নীতি এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে যা কারোরই অজানা নয়।টিআইবির করা গত বিশ বছরের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সেই বিশ বছর আগে বাংলাদেশের যে অবস্থান ছিলো আজও তার সেই অবস্থান থেকে খুব কমই সরে আসতে পেরেছে যা আমাদের জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক সংবাদ নয়।দুর্নীতির ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন ১৪ তম,যা ২০১৮ তে ছিলো ১৩ তম।এই দুর্নীতির মাত্রা এবং নানারকম পন্থা রীতিমতো বিষ্ময়কর।

গত মাসের শেষের দিকে আমার এক রিলেটিভ পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নাক,কান,গলা বিভাগে গিয়েছিলো গলায় বেজে থাকা একটা মাছের কাটা তুলবার জন্য।কিন্তু সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক সাফ জানিয়ে দিলেন আমাদের কাছে গলার কাটা তুলবার যন্ত্রপাতি নেই, আপনি বরং বরিশাল চলে যান।বিষয়টি আমি জেনে একটু অবাকই হয়েছিলাম। একটা স্বয়ংসম্পূর্ন হসপিটালে কি আসলেই এই প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো নেই নাকি ডাক্তার সাহেব কাটা তুলবার ঝামেলায় যেতে অনিচ্ছুক হয়ে এরকম দায়সারা কথা বলে দিলেন।এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য হসপিটালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আব্দুল মতিন সাহেবকে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি অনেকটা আত্ম স্বীকারোক্তিমূলক কথাই বলে ছিলেন।তার ভাষ্যটা ছিলো এরকম যে, বাবা এখানে ডাক্তারদের চিকিৎসা নিয়ে অনেক রাজনীতি চলে,তারা আমার কথা মানেনা।চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে কিন্তু ওই ডাক্তার কাজটি করতে চায়নি সম্ভবত।পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক সাহেবকে অবহিত করলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
আসলে সাধারণ জনগনের দেয়া ট্যাক্সে যাদের বেতন হয় তারা কেন এসব জনগণের প্রতি ন্যূনতম দায়বদ্ধতাটুকুও রাখেনা।সরকার আপনাকে বিকালের চেম্বার করবার জন্য বেতন দেয়না এটা মাথায় রাখা উচিত।বিভিন্ন পেশায় থাকা এরকম কিছু কীটের জন্য পুরো পেশার মানুষজন লজ্জিত হচ্ছে, দোষারোপ হচ্ছে যেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত।
রাষ্ট্রের একেবারে ছোট পর্যায় থেকে নীতিনির্ধারক পর্যন্ত একটা বিশাল অংশ দুর্নীতিগ্রস্থ এবং এই দুর্নীতিরই পৃষ্ঠপোষক।ফলে সরকার চাইলেও এই অভিশাপ থেকে কোনক্রমেই সরে আসতে পারছেনা। এই করোনা মহামারিতে যখন মানুষের জীবন বিপন্ন,জীবন-মরণ লড়াই চলছিলো তখনও জিকেজি হেলথ কেয়ার ও রিজেন্ট হাসপাতালের নমুনা পরিক্ষার নামে জালিয়াতি এবং তাতে রাষ্ট্রের বড় পর্যায় থেকে মদদ দিয়ে একে অন্যকে দোষারোপ করার বিষয়টি দেশের সংকটময় মুহূর্তেও চিরাচরিত  দুর্নীতির ভয়ানক রূপটিই জানান দেয়।
এই দুর্নীতির একটা বড় কারন অপরাধীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রশ্রয় প্রদান।
গত ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকার তার সাধ্যমত এটিকে মোকাবেলা করার চেষ্টা করে এসেছে এবং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা  বেশ প্রশংসাও কুড়িয়েছেন।যেখানে অন্যান্য দেশ শুধু করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে চলছে,সেখানে আমাদের কেবল করোনার বিরুদ্ধেই লড়তে হয়নি,একই সাথে দারিদ্র্য,দুর্নীতি,অর্থনৈতিক সংকট আরও অন্যান্য সব সমস্যার দিকে লক্ষ্য রাখতে হচ্ছিলো,যা বাংলাদেশের মতো একটি নবীন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের পক্ষে মোকাবেলা করা খুব একটা সহজতর ছিলো না।
খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগনকে সাহায্যের জন্য যখন সরকার ত্রানের ব্যবস্থা করলেন,তখন স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানদের মধ্যে সেই ত্রাণসামগ্রী চুরির হিরিক পরে যায়।খাটের নিচ থেকে তেল,পুকুরের মধ্যে থেকে চালের বস্তা উদ্ধার করতে হলো।দেশের মানুষ যখন খাবারের জন্য রাস্তায় বিক্ষোভ করছে।তারা বলছে,”যদি মরতে হয় না খেয়ে,করোনা দিয়ে কি হবে” তখনও এসব আধপেট খেয়ে বেচে থাকা মানুষের রিলিফ চুরি করতে একটুও কার্পণ্য করছিলোনা এসব জনপ্রতিনিধি নামের দুর্নীতিবাজরা।
রাষ্ট্রের সংকটময় মুহূর্তে আমাদের সবার উচিত ছিলো কাধে কাধ মিলিয়ে সরকারের পদক্ষেপগুলোকে বাস্তবায়নের লক্ষে ঝাপিয়ে পড়া। কিন্তু এই সংকটকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে রিজেন্ট হাসপাতালের পরিচালক মোহম্মদ শাহেদ ওরফে শাহেদ করিম এবং জিকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান সাবরিনা চৌধুরী  নমুনা পরিক্ষার নামে  জনগনের কাছ থেকে বিশাল অঙ্ক হাতিয়ে নিয়ে জনগনের সাথে প্রতারণা করে তাদেরকে এক ভয়ানক পরিনতির দিকে ঠেলে দিয়েছিলো। এই ভুয়া রিপোর্টের কারনে কতো যে পজিটিভ রোগীকে নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়ে তাদেরকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিলো।আবার অনেক নেগেটিভ রোগিদের পজিটিভ রিপোর্ট দিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছিলো।স্বাস্থ্যখাতে যদি এরকম অনিয়ম চলতে থাকে তাহলে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের উপর মানুষের আস্থা অচিরেই হারিয়ে ফেলবে যা মোটেই সুখকর নয়।
এসব ভুয়া রিপোর্ট বের করে করোক্রান্ত প্রবাসীরা অনেকেই বিদেশে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো,ফলে ইতালি সহ অনেক দেশই বাংলাদেশী নাগরিকদের সেসব দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বাধ্য হয়েছে।এভাবে এরা স্বাধীনতা উত্তর দেশের অর্জিত সুনামকে বহির্বিশ্ব ম্লান করে দিচ্ছে,যা মোটেই কাঙ্ক্ষিত ছিলোনা।
এরকম শাহেদ, সম্রাট কিংবা পাপিয়া সমাজে একজন নয়,অসংখ্য শাহেদরা তাদের স্ব স্ব সাম্রাজ্য নিয়ে সুখে বসবাস করছে।সবাই ধরাছোঁয়ার অগোচরেই রয়ে যাচ্ছে।রাষ্ট্রের এখনই বড় কোন পদক্ষেপ নেয়া উচিত যাতে আর কোন শাহেদের জন্ম না হতে পারে।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রশ্রয় পেয়ে এভাবে শাহেদরা যখন মাথায় চড়ে বসে,তখনই সবার টনক নড়ে।এ প্রশ্রয় যে দেশের জন্য কতো বড় ক্ষতিকর হয়ে দাড়াতে পারে তা সহজেই উপলব্ধি করা যাচ্ছে।করোনার ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত হয়েছে।বাংলাদেশ সহ অধিকাংশ দেশ জনগনকে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় নিয়ে আসার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।হয়তো করোনা নামক ভাইরাসটি বিশ্বে আর মহামারী রূপে থাকবেনা।কিন্তু বাংলাদেশের সর্বাঙ্গে বিরাজমান দুর্নীতি নামক ভাইরাসটির আদৌ কি কোন অবসান ঘটবে? নাকি থেকে যাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতির অন্তরায় হয়ে তা ভেবে দেখবার এখনই উপযুক্ত সময়।
লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ