নয়ন,ইমন,জেমি,উর্মি,লিমন এরা দশম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রী।এরা প্রায়ই ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে,পড়া দেয় না, ক্লাসে মোবাইল নিয়ে আসে,ক্লাসেই ফেসবুক চালায়,পড়ার কথা বললে প্রায়ই বেয়াদবি করে,নেশা করে,এই বয়সেই সিগারেট খাওয়া শিখেছে,অন্য মাদকাসক্ত তে আসক্ত থাকতে পারে কারন তাদের চোখ লাল ও ঝিমানো ভাব থাকে, হোমওয়ার্ক করে না,অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয় না, সাইন্সের ছাত্র ছাত্রী হলেও প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করে না।এদের চুলের স্টাইল হাল ফ্যাশনের! স্বভাব খুবই উগ্র।দল বেঁধে প্রায়ই অন্য ছাত্রদের আক্রমণ করে,এদের ভয়ে কেউ তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে না।স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার লোকজন তাদের কে কিছু বলে না। এভাবেই চলছে। একদিন গণিত শিক্ষক আজগর বিএসসি স্কুলের উত্তর গেইটে একটা গাছের পরিচর্যা করছিলেন, হঠাৎ দেখলেন নয়ন,উর্মি,জেমি,ইমন ও এদের দল ক্লাসে না গিয়ে সিগারেট খাচ্ছেন! স্যারকে দেখেও না দেখার ভান করে তারা সিগারেট খেয়েই যাচ্ছে।স্যার ভাবছিলেন কিছুই বলবেন না,কারন এদেরকে অসংখ্যবার বুঝানো হয়েছে,বাড়ীতে অভিভাবকদের বলা হয়েছে কিন্তু কিছুই হয় নি। অভিভাবকরা আরো উল্টো কথা বলেছেন, বলেছেন আমাদের ছেলে মেয়ে আমরা দেখবো,পড়াশোনা তো করেই,সারাদিন কোচিং করে, বিখ্যাত কোচিং সেন্টারে যায়, ভালো রেজাল্ট করলেই হলো,আপনারা শুধু শুধু ব্লেইম দেন! এসব শুনে হেডস্যার এবং অন্যান্য স্যারগন হতাশ হয়ে চলে আসলেন।তো আজগর বিএসসি স্যার এলাকার খুব নামকরা শিক্ষক। তিনি কয়েকবার জাতীয় শিক্ষক সম্মাননা পেয়েছেন, পেয়েছেন স্বর্ণপদক,তার নামডাক সারাদেশে।তার অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী, অনেকেই এসপি,বড় বড় ক্যাডার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন।তার খ্যাতি ও গৌরব তার প্রিয় শিক্ষার্থীরা। এবারের ব্যাচ থেকেও কয়েকজন এপ্লাস পাবেই। তিনি একেবারেই নিরঅহংকারী , সকলের সাথেই তার সুসম্পর্ক। দিনমজুর খয়েরউদ্দিনের ছেলে তমাল যাকে বিনা পয়সায় পড়িয়েছিলেন,ফর্ম ফিলাপ করিয়েছিলেন, সে যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেন স্যারকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেন,স্যারকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন । এরকম অসংখ্য ঘটনা প্রায়ই ঘটে।স্যারকে সবাই “গোল্ডেন টাচ” বলেন।
তো স্যার ইমনকে ডেকে বললেন,”কি ব্যাপার তোমরা ক্লাস করছো না কেন”? ইমন বললো,”আমরা সব পারি , আমাদের ক্লাস করতে হয় না।না পারলেও কোচিং সেন্টারে বুঝে নিবো!” স্যার বললেন,”কি বুঝো তাতো জানি তবে স্কুল প্রাঙ্গণে ধুমপান নিষিদ্ধ জানো না?”, একটু ধমকের সুরে বললেন। “জানি,তবে আমাদের জন্য নিয়ম কানুন আলাদা,আমরা এসব মানি না”
এসব শুনে আজগর স্যার আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না,ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন এবং বাকী সবাইকে অফিসে ডেকে নিয়ে দুটো করে বেত্রাঘাত করলেন। এদের মধ্যেই একজন চড় মারার দৃশ্য এবং বেত্রাঘাতের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করে ছেড়ে দিলেন।
ইমনের চাচা উপজেলা চেয়ারম্যান,সরকারি দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এই ঘটনার জন্য থানায় মামলা করলেন,সে রাতেই আজগর বিএসসি স্যার গ্রেফতার হলেন এবং এমপির নিকট রিমান্ডের আবেদন সুপারিশ করলেন এবং চাকরিৎচ্যুত করার যতো রকম দুর্বৃত্তায়ন পদ্ধতি আছে সব কিছুই করলেন।
সারাদেশে পত্র পত্রিকায় স্যারের নিষ্ঠুর অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো। আসল ঘটনা না জেনেই শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হলো, পক্ষে বিপক্ষে কলাম লেখা শুরু হলো,আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন বলে তার পাশে কোন শিক্ষক, শিক্ষক সমিতির কেউ কিছুই করলো না।তার ছাত্র ছাত্রী যারা সরকারের বড বড় চাকরি করে তারাও চেষ্টা তদবির করলো কিন্তু কিছুই হলো না।স্যারের জেল হলো এবং চাকরি চলে গেলো।স্যারের বড় ছেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র,মেয়ে ইন্টারমেডিয়েটের ছাত্রী,ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এখন পরিবারের অবস্থা কি হবে? তার স্ত্রী কখনও চিন্তাও করে নি এমন সরল নির্বিবাদী মানুষের শাস্তি এমন হতে পারে!
বি দৃ:ঘটনা বাস্তব কিন্তু চরিত্র কাল্পনিক।কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।
0 মন্তব্যসমূহ