রাজশাহীর বোয়ালিয়ায় পুলিশের একজন এস আই এর পুরুষাঙ্গ কর্তনের ঘটনাকে “নৃশংস যৌন সহিংসতা” আখ্যা দিয়ে, সহিংসতার দায় স্বীকারকারী রূপসী দেওয়ান এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে মানববন্ধন করেছে মানবাধিকার সংস্থা এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন। রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যৌন সহিংসতা বিরোধী উক্ত মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম, যৌনাঙ্গ কর্তনের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিৎ বলে দাবি করেন। এবং কারণ হিসেবে বলেন, “একজন ধর্ষিত ব্যক্তির কোন ধরণের অঙ্গহানি ঘটে না, সে চাইলে পুনরায় বিয়ে করতে পারে এবং যৌনজীবনে সুখীও হতে পারে। অন্যদিকে যৌনাঙ্গ কর্তনের কোন ভিক্টিমের পক্ষে আর কখনই বিয়ে করা বা দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়া সম্ভব নয়। যা অত্যন্ত অমানবিক। এছাড়া যৌনাঙ্গে আঘাতের ফলে মৃত্যুবরণের মত ঘটনাও অহরহ ঘটছে বাংলাদেশে। গতবছর ঠাকুরগাঁও এর রাণীসংকৈলে জোবেদা আক্তার (২৪) নামের এক কলেজছাত্রী আব্দুল লতিফ (৩২) নামের এক যুবকের অন্ডকোষ চেপে ধরে, ফলে ওই যুবক মৃত্যুবরণ করেন।”
সভাপতির বক্তব্যে ড. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, প্রতিমাসে প্রায় ১৫ থেকে ২০টির মত পুরুষাঙ্গ কর্তনের ঘটনার তথ্য আমরা পেয়ে থাকি। যার অধিকাংশই ঘটে প্রতিশোধপরায়নতা কিংবা দাম্পত্য কলহের জেরে। অপরাধের মাত্রা এবং ভয়াবহতা ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণ অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিক্টিম ব্লেমিং এবং ট্রলের মত ঘটনাগুলোও অপরাধীকে পার পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কম দায়ী নয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, এবং এইড ফর মেনের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট কাওসার হোসেন বলেন, “ মানবদেহ সংক্রান্ত অপরাধ বিষয়ে, বর্তমান বাংলাদেশে বিদ্যমান দণ্ডবিধি-১৮৬০ এর ১৬ নং অধ্যায়ে উল্লেখ করা আছে। তবে উক্ত অধ্যায়ে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা নামে সুনির্দিষ্ট কোন অপরাধ আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা নেই। কিন্তু বর্তমানে যেহেতু পুরুষাঙ্গ কর্তন বা পুরুষত্বহীন করার মত নৃশংস যৌন সহিংসতা ভয়ানকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই এই অপরাধটিকে আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করে অপরাধীর কঠিন শাস্তিবিধান অত্যন্ত জরুরী হয়ে পরেছে।
পুরুষাঙ্গ কর্তন একটি নিষ্ঠুরতম অমানবিক অপরাধ যা একজন পুরুষকে জীবিত অবস্থায় মৃতের মত করে বাঁচিয়ে রাখে। একটা মানুষকে অসহনীয় মানসিক হতাশা ও যন্ত্রণা দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। সমাজে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়ে বিধায় এই অপরাধটিকে আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করে এর শাস্তির মাত্রা বাড়ানো প্রয়োজন। অপরাধীদের জন্য যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে এই জাতীয় অপরাধ কমতে থাকবে বলে আমরা মনে করি।”
যৌন সহিংসতা বিরোধী উক্ত মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, ভুক্তভোগী এস আই এর স্ত্রী রূপসী দেওয়ান পুলিশের কাছে সহিংসতার দায় স্বীকার করেছে। রূপসীকে কারাগারে চালান করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বোয়ালিয়া মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।
ওসি মিস্টার বর্মণ চিকিৎসকের বরাত দিয়ে জানান, চিকিৎসকগণ সার্জারীর মাধ্যমে পুরুষাঙ্গ প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। ভুক্তভোগী এসআই এর অবস্থা বর্তমানে আশঙ্কাজনক। বর্তমানে তিনি ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পূর্ববর্তী দাম্পত্য কলহের জের ধরে, রূপসী দেওয়ান তার স্বামী ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় উক্ত সহিংসতার ঘটনাটি ঘটান। ধারালো অস্ত্র দিয়ে যৌনাঙ্গ কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে রূপসী। পরে ভুক্তভোগীর চিৎকার শুনে স্থানীয়রা তাকে রাজশাহী মেডিকেলে নেয়। ক্রমাগত অবস্থার অবনতি হলে সেখাকার চিকিৎসকগণ তাকে ঢাকায় ট্রান্সফার করেন।
0 মন্তব্যসমূহ