গত মোদী বিরোধী আন্দোলনে কট্টর হিন্দুত্ববাদী নরঘাতক নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করেছি বলে এই দেশের ইসলামপন্থীদের প্রশংসা পেয়েছি, তবে সরকারপন্থীরা আমাকে হত্যা করা, ঘুম করার হুমকি দিয়েছে, আর সরকার ৩ টি মামলা উপহার দিয়েছিলো!
তা*লেবানদের আফগানিস্থান দখল এবং সেখানকার মানবিক সংকট, বিমানে মানুষের সেই নৃশংস মৃত্যু আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে, তাই সেই নির্মম মৃত্যু নিয়ে লিখলে এই দেশের কিছু অশিক্ষিত ফেইসবুক মোল্লারা কমেন্টে, ইনবক্সে কিংবা মোবাইলে কল দিয়ে আমাকে নাস্তিক মুরতাদ বলে গালি দিয়ে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে আর গালি যা দিয়েছে, সেটা তো সবাই দেখেছে!
আল্লামা মামুনুলহক, রফিকুল ইসলাম মাদানী, আমির হামজা হুজুররা আজকে ৭ মাস মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী বিনাবিচারে বন্দী। সারাদেশে কেউ যখন তাদের মুক্তি নিয়ে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না, তখন আমি আমার সকল সাংগঠনিক পরিচয় ভুলে গিয়ে দিনের পর দিন তাদের মুক্তি চেয়ে রাজপথে বক্তব্য দিয়েছি, ফেইসবুক লাইভ করেছি এবং লেখালেখি করেছে।যার কারণে নিজ সংগঠনেও অনেকের রোষানলে পড়তে হয়েছে। তবুও আমি নিরপরাধ আলেম সমাজের মুক্তি চাই এবং এই মুক্তি চেয়ে যাবো।
যখন এগুলো করি, তখন ইসলামপন্থীরা খুশি হয়ে যায়।আমাকেও তারা ইসলামী মৌলবি ভাববে শুরু করে।আমার প্রচুর প্রশংসা করে; আসলে আমি এমনটা নয়!! তাদের মনমানসিকতা এতেটাই নিচু যে আমার বয়স্ক মায়ের সাথে ছবি আপলোড করলেও তারা কটুক্তি করতে ছাড়ে না; আমার মা গ্রাম্য মানুষ এবং সবসময় ইসলামী জীবন ব্যবস্থা মেনে চলেন!
গতকাল কুমিল্লাতে পূজামণ্ডপে একখানা পবিত্র কুরআন শরীফ পাওয়া গিয়েছে।এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ।তবে এটা কে বা কারা রেখেছে, সেটা কেউ জানে না। একজন মুসলমান হিসেবে আপনি যেমন করে পবিত্র ইদের দিনে হিন্দুদের দেবীকে এনে ঈদগাহে রাখবেন না, ঠিক তেমনি একজন হিন্দুও স্বাভাবিকভাবে তার সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজায় পবিত্র কুরআন শরীফকে তাদের পূজামণ্ডপে রাখবে না। এটাই স্বাভাবিক!!
তারপরেও যদি এমনটা ঘটে আর কে বা কারা রেখেছে, আপনি সেটা না দেখেন, তাহলে বুঝতে হবে এর মধ্যে নিশ্চয়ই বড় ধরনের গোলমাল রয়েছে, ষড়যন্ত্র রয়েছে। ভারতে প্রচুর সাম্প্রদায়িকতা রয়েছে। সেখানে গরু খাওয়ার অপরাধে জীবন্ত মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, যেটা সমগ্র বিশ্বে বিরল ঘটনা! বাংলাদেশে এমন উগ্র সাম্প্রদায়িকতা নেই। বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে হিন্দু মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসবাস করে আসছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিকভাবে জায়গা জমি নিয়ে অনেক সময় মারামারি, কাটাকাটি হয়।সেটা মুসলিম মুসলিম হয়, হিন্দু হিন্দু হয় আবার হিন্দু মুসলিমও হয়। তবে সেটা ধর্মীয় কারণে নয়, ব্যক্তি স্বার্থের কারণে এমনটা হয়!
গতকাল আমার পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআন শরীফকে অবমাননা করা হয়েছে।অন্য ১০ জন মুসলমানের ন্যায় আমারও খারাপ লেগেছে, রাগ হয়েছে কিংবা রক্ত গরম হয়েছে। পবিত্র হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, তোমরা পুত্রের অপরাধে পিতাকে শাস্তি দিতে পারো না, আবার পিতার অপরাধে পুত্রকে শাস্তি দিতে পারো না। পৃথিবী এবং ইসলামের প্রথম লিখিত সংবিধান মদীনার সনদ অনুযায়ী এবং মক্কা বিজয়ের ঘোষণা অনুযায়ী সংখ্যাঘরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্র মুসলমানদের দায়িত্ব হচ্ছে সংখ্যাগঘুদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের ধর্মীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সুতরাং কুমিল্লার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য, কে বা কারা সেই ঘটনা ঘটিয়েছে সেটা যেহেতু আপনি এখনও জানেন না, তাই আপনি সারাদেশের হিন্দুদেরকে দায়ী করতে পারেন না, তাদের পূজামণ্ডপে হামলা করে পারেন না, তাদের ঘরবাড়িতে হামলা করতে পারেন না।বরং আপনার দায়িত্ব হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করা।
একদল লোক তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে চায় যে এই দেশটাকেও ভারতের মতো একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে। ভারতে মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে, আর আপনিও যদি বাংলাদেশে হিন্দুদের নির্যাতন করতে শুরু করে দেন, তাহলেই কেল্লা ফতে! বাংলাদেশও একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে পরিচিত পাবে।একটি রাজনৈতিক দল ও তাদের দোসরদের লাভ হবে।
হিন্দুদের বাড়িতে মণ্ডপে হামলা করবেন আপনি, পুলিশের গুলি খেয়ে মরবেনও আপনি, মামলা খেয়ে জেলেও যাবেন আপনি আর রাজনৈতিক ফয়দাটা নিবে ওরা!!
সুতরাং এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের হিন্দু মুসলমান সকলের প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান থাকবে, আপনারা মাথা ঠাণ্ডা রাখুন, কোনোকিছু বলা ও করার আগে ভেবে চিন্তে কাজ করুন।যাতে করে আপনাদের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে আপনাদের পরস্পরকে রক্তাক্ত করে কেউ ফয়দা লুটতে না পারে।
পরিশেষে, ধর্ম যার যার, দেশটা সবার। আসুন৷ সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
0 মন্তব্যসমূহ