প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় স্কুলের সামনে বরিশালের আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসির) মেয়েকে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে মারধর ও অশালীনভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) রাতে এ ঘটনায় মারধরের শিকার স্কুলছাত্রী আবিরা চরোয়ার শেফারের মা মৌসুমী আক্তার দুই যুবকসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আসামিরা হলেন- নগরীর ৩নং ওয়ার্ডের মাতাসার এলাকার তৌসিফ মাহমুদ স্বধীন (২২), আসাদ ইসলাম (২৩), বগুড়া রোড দিলবাগ অলির ফাতেমা খাতুন চম্পা (৪৫) ও তার মেয়ে সাবিকুন নাহার শশী (১৮)।
আবিরা ছারওয়ার শেফা (১৮) আগাইলঝাড়া পুলিশ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম ছারওয়ারের মেয়ে। গোলাম ছারওয়ার তার কাজের কারণে আগৈলঝাড়ায় থাকেন। তবে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার সুবাদে তার পরিবার নগরীর কাজীপাড়া লুৎফর রহমান রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকে। এবার শেফা শহরের সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী।
স্কুলছাত্রীর মা মৌসুমী আক্তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, শেফা ও সাবিকুন নাহার শশী একই শ্রেণিতে পড়ে। এ জন্য তারা পরিচিত। তারা একসঙ্গে কোচিং করিয়েছেন। কোচিং সেন্টারটি শশীরের বাড়ির কাছেই। কোচিং সেন্টারে যাওয়ার পথে শেফা প্রায়ই শশীকে ফোন করে একসঙ্গে যেতেন।
মাস কয়েক আগে শশীকে ফোন করতেই তাঁর বাড়িতে যান শেফা। সেই সময় শেফা শশী ও আসাদ ইসলামকে কাছ থেকে দেখেছিলেন। সেই সময় শশী ও আসাদ শেফাকে কাউকে না বলতে বলেন। বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন শেফা। তবে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন শশী ও আসাদ। শশী এবং আসাদ আট শেফকে ফাঁদে ফেলার চক্রান্ত করে। তাহলে শেফা এ বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস পাবে না। শশীরের মা ফাতেমা খাতুন চম্পাও তাদের সাহায্য করেন।
তাদের পরিকল্পনা ছিল আসাদ তার বন্ধু তৌসিফ মাহমুদ স্বধীনের সাথে শেফার সাথে প্রেম করবে। এরপর তারা শেফারের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করবে।
অভিযোগে আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে, পরিকল্পনা অনুযায়ী, আসাদ তার বন্ধু স্বধীনকে শেফারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। কিছু দিন পরে, স্বাধীন শেফ প্রেম প্রস্তাব করে। কিন্তু শেফা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর থেকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে শেফাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে সে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর স্কুল থেকে ফেরার পথে স্বধীন ও তার কয়েকজন সহযোগীকে শাইফার বাধা দেয়। স্বাধীন শেফকে তার সাথে হাঁটতে যেতে বলা হয়। যদি শেফার রাজি না হয় তবে স্বাধীন টানবে। এক পর্যায়ে শেফাকে মারধর করা হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশে হাত দেয়। শেফারের চিৎকারে পথচারীরা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পর কয়েক দিন নিজের শরীর ঢেকে রেখেছিলেন স্বধীন। তারপর আবার শেফা স্বাধীনভাবে উত্যক্ত করতে শুরু করল।
গত ৩০ নভেম্বর স্কুলে ক্লাস পরীক্ষা দিতে যায় শেফা। পরীক্ষা শেষে শেফাকে ডেকে স্কুলের সামনে নিয়ে যান শশী। শশীরের মা ফাতেমা খাতুন, আসাদ ও স্বধীন আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাদের দেখে শেফা চলে যেতে চাইলে সড়ক অবরোধ করা হয়। এক পর্যায়ে তারা তাকে মারধর করে। তিনি ঘোমটা ও কাপড়-চোপড় ধরে টেনে নিলেন।
শাইফারের মা মৌসুমী আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, তিনি শায়েফার স্কুলের এক শিক্ষককেও বিষয়টি জানান। এরপর থেকে স্বধীন, আসাদ, ফাতেমা খাতুন ও তার মেয়ে শশী শেফাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। স্কুল ও কোচিং সেন্টারে শায়েফারের নামে অশ্লীল ও অশ্লীল কথা ও সব ধরনের অপবাদ প্রচার করছে। সম্প্রতি হয়রানির মাত্রা বেড়েছে। লজ্জা শেফাকে বাড়ি থেকে বের হতে বাধা দেয়। কোচিং সেন্টারে যাওয়া যাচ্ছে না। আবেগে ভেঙে পড়েন শেফা। বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। শেফাকে সুস্থ করার জন্য একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও তিনি বাইরে যেতে ভয় পান।
এ ব্যাপারে আগাইলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেফরের বাবা গোলাম ছারওয়ার বলেন, প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমি ভেবেছিলাম স্বধীন, আসাদ, ফাতেমা খাতুন এবং তার মেয়ে শশী স্কুল শিক্ষককে মৌখিকভাবে জানানোর জন্য আমার মেয়ে শেফাকে হয়রানি করা থেকে বিরত থাকবে। তাছাড়া বিষয়টি জানাজানি হলে মানুষ ভিন্ন কথা বলবে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম জানান, আগৈলঝাড়া থানার ওসি গোলাম ছারওয়ারের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0 মন্তব্যসমূহ