মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বর্তমানে মাত্র একজনকে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর।
লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শুক্রবার (১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে শ্রমিক অধিকার পরিষদ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, 'আজকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আপনি সবজায়গায় শুধু একজন মানুষের নাম দেখতে পাবেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যাকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বাকিদের কোনো অবদানই স্বীকার করা হয় না। '
নুরুল হক নুর বলেন, 'ওই সময় (মুক্তিযুদ্ধের সময়) কোনো জাতীয় নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেননি। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রলীগ নেতারা। আজ যারা মিথ্যা বিকৃত ইতিহাস দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে, তরুণদের বিভ্রান্ত করছে, তাদের মনে আছে তরুণরা প্রকৃত ইতিহাস জানে। আপনি আপনার ভণ্ডামি জানেন। '
গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব বলেন, 'ডাকসু তখনকার ভিপি আ স ম আবদুর রব, তোফায়েল আহমেদ, শাহজাহান সিরাজসহ তরুণ ছাত্রদলের নেতারা মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামকে আরও বেগবান করেছিলেন। আজ দেশের মাফিয়া ব্যবস্থাকে কবর দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এই সময়ে তরুণদের যে জাগরণ, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এই যুবকদের মাধ্যমেই মাফিয়া সিস্টেমের কবর তৈরি করে এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। '
সাবেক ডাকসু ভিপি বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রুতি ছিল কৃষক শ্রমিকদের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে এসেম আবদুর রব ভাইয়েরা স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করলে এই পল্টন ময়দানে তেসরা মিছিলের ছাত্রনেতারা স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। '
নূরুল হক নূর বলেন, স্বাধীনতার ইশতেহারে ৫৪ হাজার ৫০৬ বর্গমাইল ভৌগোলিক এলাকায় ৭ কোটি মানুষের বসবাস হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাম ছিল বাংলাদেশ। এই দেশ গঠন করে নিম্নলিখিত তিনটি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
১. স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে বিশ্বে শক্তিশালী বাঙালি জাতি গঠন করে বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতির উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. কৃষক ও শ্রমিকের রাজনীতিকে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রবর্তনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে এই অঞ্চলে ব্যক্তি-থেকে-ব্যক্তি বৈষম্য দূর করা যায়।
৩. স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করতে হবে এবং ব্যক্তি, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ একটি বিশুদ্ধ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ডাকসু'র সাবেক এই ভিপি বলেন, স্বাধীনতার ইশতেহারের তিনটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল এই তিনটি। যা এই পল্টন ময়দানে তেসরা মিছিলের ছাত্রনেতারা পাঠ করান।
নুরুল হক নুর বলেন, "এটা অস্বীকার করা যায় না যে, আজকে যে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছে, তা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের অবদান ছিল। এটা ঠিক যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রগর্ভ, বজ্রধ্বনি, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন, স্বাধীনতার সংগ্রামকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।
তবে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কারো অবদানকে স্বীকার করতে চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায়, তখন তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের জেলে, সৈয়দ নজরুল ইসলাম তখন প্রবাসী সরকার গঠন না করলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আবদুর রহমান ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, শ্রমিক ও গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা।
0 মন্তব্যসমূহ