Hot Posts

6/recent/ticker-posts

হিন্দু মুসলমানদের উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সম্প্রীতি নষ্টের জন্য দায়ী; নেপথ্যে অপরাজনীতি

বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ এবং পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হলো সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়। হাজার বছর ধরে আবহমানকালের ধারাবাহিকতায় এখানে সকল ধর্মের লোক স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে।এখানে সকল ধর্মের,বর্ণের, গোত্রের মানুষের সামাজিক বন্ধন অত্যন্ত দৃঢ় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সামাজিক যোগাযোগ খুবই বন্ধুত্বপরায়ণ।
একসাথে বসে হিন্দু মুসলমানদের এক রুটি ভাগ করে খাওয়ার অসংখ্য উদাহরণ আছে।হাসি কান্না আবেগ, আনন্দ বেদনা ভাগাভাগি করে একান্তভাবেই নিজস্ব একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চলছে।কেউ কারো ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে না,কেউ কারো অনুভূতিতে আঘাত করছে না,সবাই সবাইকে সম্মান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দিয়ে একটা সম্প্রীতি বজায় রাখতে চেষ্টা করছে। অফিস আদালত,স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গাতেই সম্প্রীতি বজায় রেখে চলাফেরা করছে,কারো সমস্যা হচ্ছে না।
হিন্দু মুসলমানদের এই যে বন্ধন এটা হঠাৎ করে কে বিনষ্ট করছে? কে এই বিষবাস্প ছড়িয়ে ফায়দা হাসিল করতে চেষ্টা করছে? সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস কতোটা ভয়াবহ ও ভয়ংকর তা আমরা আগে অসংখ্যবার দেখেছি, ধর্মকে ব্যবহার করে এক শ্রেণীর অসাধু কতিপয় বকধার্মীক কি পরিমান দাঙ্গা ছড়িয়ে রক্তের বন্যা বয়ে দিতে পারে তা কল্পনাতীত! হিন্দু মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং মুসলিম মৌলবাদীরা সব সময় এটাই চায় কিন্তু যারা মৌলবাদী না তারা কেন তাদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে?
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে হাজার হাজার হিন্দু মুসলমানদের রক্ত একই নদীতে অসংখ্যবার প্রবাহিত হয়েছে! রক্তের লাল রং একই শিহরণ জাগানো অনুভূতি সৃষ্টি করেছে, অসংখ্য মানুষ উদ্ভাস্তু জীবন যাপন করছে, পাকিস্তানের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার নির্যাতন এবং ভারতে মুসলমানদের উপর অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়নের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে!
তুচ্ছ ঘটনায় ঘর বাড়ী,দোকান পাট,গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা বার বার শিহরিত করেছে! হাজার বছরের বন্ধন এক মূহুর্তের মধ্যেই বিলীন হয়ে নিঃস্ব হয়ে হিন্দু মুসলমান উভয় গোত্রের মানুষের দুর্ভোগ দুঃখ দুর্দশা ও মানবিকতার লঙ্ঘিত হয়েছে।

চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার নিরীহ হিন্দু মুসলমান এসব কুলাঙ্গার দুর্বৃত্তদের হামলায়! ১৯৪৬ এর কলকাতা দাঙ্গা,১৯৪৭ এর দেশ ভাগ,১৯৬৪-৬৫ এর পূর্ব পাকিস্তান বা ঢাকা দাঙ্গা,১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের বিভৎস দাঙ্গা,আসাম দাঙ্গা,১৯৯১-৯২ বাবরি মসজিদ কে কেন্দ্র করে দাঙ্গা,২০০০ সালের দাঙ্গা,২০০১ এর দেশবিরোধীরা ব্যাপক বোমা হামলা উল্লেখযোগ্য।এ সকল দাঙ্গায় শতো শতো মুসলিম হিন্দু নিহত ও আহত হয়েছেন।ঘর বাড়ী থেকে উদ্ছেদ ,ঘর বাড়ী, দোকান পাটে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক দুর্বৃত্তায়ন ,জোর করে উদ্ছেদ , ধর্ষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।

এসব কারা করছে? একটু চোখ খুললেই বোঝা যায় এর উদ্দেশ্য! এসব কুলাঙ্গার হায়েনারা বার বার ধর্মকে পুঁজি করে নিজের ফায়দা হাসিল করেছে। আমাদের দেশের ক্ষমতার ভারসাম্য হারিয়ে, প্রসাশনের উদাসীনতা,নগ্ন বিচার ব্যবস্থা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং অপরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এর জন্য অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করা হয়।একটা নগ্ন সত্য হলো অনেক সময় সরকারি দলের লোকজন নিজেদের ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে এ রকম দুর্বৃত্তায়ন করতে ধর্মকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করতে কুণ্ঠিত হচ্ছে না। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সরকারি বিরোধীদলীয় নেতা কর্মী এসকল দুর্বৃত্তায়ন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রবল বিরোধিতার কারণে এসকল কুলাঙ্গার লোকজন ধর্মকে পুঁজি করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করে।
জমি দখল,ব্যাক্তিগত দ্বন্দ্ব, পারিবারিক দ্বন্দ্বের জন্যে অনেক সময় ধর্মকে পুঁজি করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।
ইদানিং যেটা হচ্ছে মুসলিম উগ্রবাদী দল ইসলাম রক্ষার নামে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও হামলা করছে, আইএসআইয়ের এজেন্টদের মাধ্যমে বিভিন্ন উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। তালেবান প্রতিনিধি ও এর দোসররা, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম,আল্লার দল,লাভ জিহাদ, হিজবুত তাহরী, হিজবুত তাওহীদ এবং অন্যান্য ছোট ছোট দলগুলোর দুর্বৃত্তায়ন বেড়েই চলেছে।কাট মোল্লার দল এবং ওয়াজ মাহফিলে উস্কানিমূলক বক্তব্য নিয়ন্ত্রনহীন এসব দল ইসলামের ভুল ব্যাখা করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তরুণদের উদ্বৃত্ত করে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।অথচ ইসলাম শান্তির ধর্ম,ত্যাগের ধর্ম,অন্তরের গভীরে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি অর্জন।ইসলামের আসল সৌন্দর্য হলো সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করা কিন্তু উগ্রবাদী দলগুলোর ভুল ব্যাখার জন্য সাধারণ মানুষ তাদের ফাঁদে পা ফেলে ,না বুঝে এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে।

অন্য দিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের উগ্র সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য ও প্রতিবেশী দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিপীড়ন নির্যাতন ও উস্কানিমূলক বক্তব্যে দিয়ে হিন্দু তরুনদের উদ্ভূদ্ধ করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। হিন্দু পরিষদ,ইসকন,বিশ্ব হিন্দু ঐক্য পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বিজেপি দাঙ্গাবাজ এজেন্ট, হিন্দু প্রবর্তক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস জিইয়ে রেখে ফায়দা লুটতে চাইছে।
ISKON এর পূর্ণ রূপ হলো, International society for Krishna consciousness. এর প্রতিষ্ঠাতা অভয়াচরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী শীল প্রভূপাদ। এটা নিউইয়র্কে ১৩ ই জুলাই ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর মূল উদ্দেশ্য কৃষ্ণ সেবা ও ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতা হলেও এটা প্রকৃত হিন্দু সম্প্রদায়ের বা হিন্দু ধর্ম নয়।সনাতন দের সাথে ইসকনের সদস্যদের ব্যাপক দুর্বৃত্তায়ন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ইদানিং বেশ লক্ষণীয় বিষয়।
২০০৪ সালে জোর করে মন্দিরের জায়গা দখলে নিয়ে ইসকন মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয় চট্টগ্রামে যেটা নিয়ে সনাতনদের ব্যাপক ক্ষোপ রয়েছে। চট্টগ্রামের হিন্দু প্রবর্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্তী বলেছেন তাদের কে ইসকন চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করছে।ইসকনের আন্তর্জাতিক সদর দপ্তর ভারতের মায়াপুর। এছাড়াও নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য প্রদেশে এদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। মায়াপুরে আছে হিন্দুদের পবিত্র স্থান বৃন্দাবন,মথুরা,অযোদ্ধা ।এই স্থানগুলো আধ্যাত্মিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র।
ধারণা করা হয় ইসকনের অর্থদাতা ও অর্থের যোগানদাতা শুধু উগ্রবাদী হিন্দু সদস্য নয় এর পিছনে আছে কুখ্যাত ইহুদি চক্রের যেমন স্টিলসন জুডা,হার্ভে কক্স,ল্যারিসিন টমাস, হপকিন্স যারা মোসাদ ও এর সহযোগী নামে পরিচিত।এর কর্মকান্ড বিশ্বব্যাপি পরিচালিত হচ্ছে।মধ্যেযুগের চৈতন্য থিয়েরি ” নির্যবন করো আছি সকল ভূবন” অর্থাৎ সারা পৃথিবী থেকে যবন মানে মুসলমান ধ্বংস করো। বাংলাদেশ এর গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান ইসকন নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের নথি উদ্ধার করেছে। হিন্দু প্রবর্তক সংঘ,বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, চৈতন্য মহাপ্রভু ধর্মের নামে সাধারণ হিন্দুদের ব্যবহার করছে।এসব কুলাঙ্গারা অনেক সময় নিজেরাই নিজেদের দেবদেবী ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে উস্কানিমূলক বক্তব্যে দিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে।

রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং উগ্রবাদী দলগুলোর ফায়দা হাসিলের জন্য অনেকাংশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে।রামু কর্ম, বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংস, নাসির নগরে হামলা, খুলনায় দাঙ্গা, কক্সবাজার, চাঁদপুর,ভোলা বরগুনা সিলেটে এরকম অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে।হিন্দুরা আছে মহা চিপায়, বিএনপি মনে করে ওরা সবাই আওয়ামীলীগ আর আওয়ামীলীগ মনে করে ওরা বিএনপি।

সম্প্রতি কুমিল্লার নানুয়ারদীঘির পূজামণ্ডপে হনুমানের পায়ের নিকট পবিত্র গ্রন্থ কোরআন রাখার অভিযোগে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আচ্ছা,কোন সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন কি এটা করবে? এটা একটা শান্তিপূর্ণ এলাকা, এখানে কখনো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয় নি! শতো শতো বছর ধরে হিন্দু মুসলমানদের বসবাস কিন্তু কি হলো?
একদল রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লো! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও ছবি ,ভিডিও ক্লিপ প্রকাশিত হলো,একদল ধর্মপুত্র এটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করলো, জেলায় জেলায় পূজোমন্ডুপ ধ্বংস করা হলো, পুলিশের গুলিতে কয়েকজন মুসলমান নিহত হলো! এটা কেন, কেন কেন? এটা নিয়ে প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিজেপির একজন নেতা ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করার মতো বাড়াবাড়ি বক্তব্য দিয়েছেন। প্রতিবেশী দেশের নাক গলানোর দরকার কি? আমাদের সমস্যা আমাদের সমাধান করতে দিন। এখন প্রশ্ন হলো,
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কয়টা সঠিক বিচার হয়েছে? এটা অনেকের মতো আমারো প্রশ্ন। এবার কি পারবে এই বিষবাস্প নির্মূল করতে?

ব্লাইন্ড ফিউচার:লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ