Hot Posts

6/recent/ticker-posts

শিক্ষা সঙ্কট দূর করতে নিবন্ধিত প্রার্থীরা প্যানেল ভিত্তিক নিয়োগ চায়।

চরম শিক্ষক সংকট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা দূর করতে নিবন্ধিত প্রার্থীরা প্যানেল ভিত্তিক নিয়োগ চায়।আজ ৮ অক্টোবর ২০২১ ইং তারিখে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে নিবন্ধিত প্রার্থীরা।তাদের দাবি এর আগে যখন এনটিআরসিএ এর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে তখন শুধু পাশ মার্ক ৪০ পেলেই চাকরির সুযোগ মিলতো কিন্তু ১৩ তম নিবন্ধনধারী থেকে শুরু হয় মেধাতালিকা ভিত্তিক নিয়োগ এর ফলে অপেক্ষাকৃত কম নম্বরধারী বার বার চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।তাদের দাবি করোনা কালীন সঙ্কটে শিক্ষা ব্যবস্থার চরম সংকটে এমতাবস্থায় শিক্ষা সংকট নিরসনে এনটিআরসিএ প্যানেল ভিত্তিক নিয়োগ দিলে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে বলে মনে করেন।এর আগে স্টাফ নার্স, ঊনচল্লিশ তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে শুধু প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল এর ভিত্তিতে ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে চিকিৎসা সঙ্কট দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

২০০৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। উদ্দেশ্য ছিল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষক নির্বাচন করা। ২০০৬ সালের ৩০ জুলাই গেজেট পাস করে মন্ত্রণালয়। পরিবর্তন আসে এনটিআরসিএর। প্রতি বছর অক্টোবর মাসে থানা শিক্ষা কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট থানাধীন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ ও বিষয়ভিত্তিক পদ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করবেন এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উক্ত তালিকার সঠিকতা যাচাই করে নভেম্বর মাসের মধ্যে এনটিআরসিএর অনুকূলে পাঠাবেন। এনটিআরসিএ উক্ত তালিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা গ্রহণ করবে। এভাবে চলছিল এনটিআরসিএর বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ। তখন সনদের মেয়াদ ছিল ৫ বছর। ফলে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সনদ পেলেও সনদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল। ২০১৩ সালের ২০ মে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সচিব সনদের মেয়াদ ৫ বছর বাক্যটি বিলুপ্ত করে সনদের মেয়াদ আজীবন- এ মর্মে রায় প্রদান করেন।
শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া তখনো ছিল ম্যানেজিং কমিটির হাতে। নামমাত্র পরীক্ষা নিয়ে নিজেদের মনোনীত প্রার্থীকে এগিয়ে রাখা হতো। নিবন্ধন মার্ক কোনো বিষয় ছিল না। মূল যোগ্যতা (স্বজনপ্রীতি ও ঘুষবাণিজ্য) ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। এছাড়াও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বারবার নিয়োগ পরীক্ষার নামে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন ফি বাবদ বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে পাস হয় নতুন গেজেট। নৈর্ব্যক্তিক ও লিখিতের পাশাপাশি যোগ করা হয় মৌখিক। এককভাবে প্রার্থী নির্বাচন করে শূন্য পদে নিয়োগ সুপারিশের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা নেয় এনটিআরসিএ। অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি বন্ধের উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুপারিশের ক্ষমতা দেন এনটিআরসিএর হাতে। ২০০৬ সালের গেজেটে নির্বাচিত নিবন্ধিতদের জন্য শুরু হয় প্রহসন। আজ্ঞাবহ এনটিআরসিএর হয়ে যায় শুধু নতুন গেজেটের পক্ষে। নতুন গেজেট দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ও নিয়োগ বঞ্চিত হয়ে ১-১২তমদের কিছু অংশ আদালতের দ্বারস্থ হন, রিট করেন। এতে আটকে যায় ১৩তমদের নিয়োগ সুপারিশের কার্যক্রম। ১৩তমদের একদল আন্দোলন করে, আদালতের দ্বারস্থ হন এবং জন রিট করেন। ২০১৬ সালের গণবিজ্ঞপ্তিকে প্রথম চক্র ধরে নিয়োগ সুপারিশ কার্যক্রম চালু হয়। এদিকে ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৬৬টি রিটের নিষ্পত্তি করে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য ৭ দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি রায় দেন বিচারপ্রতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপ্রতি মো. মোহাম্মদ উল্লাহ। বিভিন্ন জেলায় নিবন্ধন সনদধারীদের প্রায় দুই শতাধিক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে এ রায় দেন আদালত। কিন্তু রায়ের ৭নং পয়েন্টে বলা ছিল- বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নির্ধারণ করতে শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে সরকার। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এনটিআরসিএর দেয়া ২০১৮ সালের দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩৫+ বয়সিদের আবেদনের সুযোগ রাখা হয় না। আবারো ক্ষতিগ্রস্ত ও নিয়োগ বঞ্চিত হন ১-১২তমদের ৩৫+ নিবন্ধনধারী। যৌক্তিক আন্দোলনের কারণে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩৫+ নিবন্ধনধারী পুনরায় আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়। এনটিআরসিএর অব্যবস্থাপনা ও অদূরদর্শিতার কারণে নিবন্ধনধারীরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও হচ্ছে- এর দায়ভার কার? কখনো কি জবাবদিহিতার আওতায় আসবে না এনটিআরসিএ?
মূল কথায় আসা যাক- আবেদন সংখ্যা, আবেদনকারীর সংখ্যা এবং প্রকৃত চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা এক হতে পারে না। কেননা, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন পড়েছে ৯০ লাখ। এক একজন গড়ে ১০০টা পর্যন্ত আবেদন করেছেন। কেউ জমি বিক্রি করে, কেউ গহনা বন্ধক রেখে আবার কেউ বা ঋণ নিয়ে। যে যতই করুক না কেন- কেউ কি একটার অধিক চাকরি করতে পারবে? তাহলে প্রকৃত চাকরিপ্রত্যাশীর ৯০ হাজারের বেশি ভাবাটা বোকামি নয় কি? এনটিআরসিএ এ অব্যবস্থাপনা সবারই জানা। এ কারণে ধরে নিলাম তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ২০-৩০ হাজার চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করেননি। এখানে বলে রাখা ভালো- ২০-৩০ হাজার চাকরিপ্রত্যাশী মানে কিন্তু প্রায় ৬০-৯০ হাজার নিবন্ধন (একই ব্যক্তির একই সঙ্গে দুটি, তিনটি এমনকি চারটি পর্যন্ত নিবন্ধন আছে) এবং ৬০-৯০ হাজার নিবন্ধন মানে প্রায় ৬০-৯০ লাখ আবেদন। এনটিআরসিএ প্রকৃত চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা প্রকাশ না করলেও নির্দ্বিধায় বলা যায়- মোট চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা ১ থেকে দেড় লাখের একজনও বেশি হবে না। হয়তো আরো কম হবে কারণ এ হিসাবটা ইনডেক্সধারীসহ। আর এত ধোঁয়াশা এনটিআরসিএ কেন করছে সে কথা কারো না জানার কথা না। শিক্ষক নিবন্ধন সনদ, চাকরির সনদ, একাডেমিক সনদ নয়। তাই সনদ যার, চাকরি তার। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কৃত্রিম শিক্ষক সংকট দূরীকরণে প্যানেল ভিত্তিক নিয়োগ এর কোনো বিকল্প নেই। মুজিববর্ষের উপহারস্বরূপ একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তিই পারে এক আবেদনে প্যানেল ভিত্তিক নিয়োগ এর ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিক্ষক সমাজকে অভিশাপমুক্ত করতে। সরকারের ভাবমূর্তি বিশ্বদরবারে সমুন্নত রাখতে আর কোনো গণবিজ্ঞপ্তি নয়। এখন প্যানেল ভিত্তিক নিয়োগ সময়ের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি।
আমির আসহাব,
আরমানীটোলা, ঢাকা-১১০০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ